শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরীর ‘আত্মঘাতী বাঙালী’

শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরীর ‘আত্মঘাতী বাঙালী’

শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী, যিনি ৯১ বছর বয়সে কলম ধরেছিলেন বই লেখার জন্য। নিজের সারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোগুলো বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ বইটিতে।

ইংরেজি ভাষা, সব সময় যে ভাষাটির প্রতি অনেকের বিতৃষ্ণা, ক্ষোভ তা কিন্তু ইংরেজদের জন্য অনুমোদন হয়নি। খোদ সে সময়কার ইংরেজি জানা কয়েকজন বাঙালিই ইংরেজি ভাষা অনুমোদনের জন্য পীড়াপীড়ি করেছিল। এখনকার সময়ে এসেও ইংরেজি বিষয়টার গুরুত্ব আগের মতোই রয়েছে। বলা যায় ক্ষেত্রবিশেষে সেটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর অতীতের মতো এখনো মানুষজন বিদেশি ভাষা জানার চেয়ে সে ভাষার লোকদের চালচলন, পোশাক–আশাক, রীতিনীতিতে অভ্যস্থ হতে বেশি ব্যস্ত থাকে।

বিবাহ ও দাম্পত্যজীবনের অনেক বিষয় নিয়ে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচিত হয়েছে প্রেমের বিয়ে ও সম্বন্ধ করা বিয়ের পার্থক্য নিয়ে, যা কালে কালে পরিবর্তীত হয়েছে। এ ছাড়াও লেখকের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, সমাজে নারীর সতীত্ব নিয়ে যে বিশ্বাস ছিল-আছে-থাকবে, শরৎচন্দ্র নারীদের যেসব চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমাজে চিত্রায়িত করেছেন, তার বাস্তবসম্মত বিশ্লেষণও জায়গা পেয়েছে। এর ফলে অতীতের অনেক অবাক করা বিষয় পাঠকেরা জানতে পারবেন। মেয়েদের বিবাহের বয়স নির্ধারণ থেকে শুরু করে সামাজিক রীতিনীতি, মানুষের চিন্তা চেতনা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়ও অন্য অনেক দেশের আলোচ্য বিষয়গুলো প্রবেশ করে একত্রিত হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের চিন্তাধারার বাইরে। বহু বিশ্লেষণ না করলে যার সত্য উদ্‌ঘাটন সম্ভব না।

বাঙালি মানুষের জীবনে ঈশ্বর–প্রেম, মনুষ্য–প্রেম কিংবা চরিত্র বিশ্লেষণের দিকটাও অনেকটা ধারকৃত। মৌলিক বিষয় একদমই নেই, সেটা বলা যাবে না। তবে বিদেশি বাহ্যিক আবরণের ফলে অনেক মৌলিক বিষয়বস্তুও কালের ইতিহাসের চাপে চাপা পড়ে গেছে। আর যা কিছু বাকি আছে, সেগুলোও প্রায় বিলুপ্ত বলা যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিংবা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেকের সাহিত্যের রচনাগুলোতে সৃষ্টি ছাড়াও যে অনেক বাস্তব অসঙ্গতি রয়েছে, চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্যেও বিন্দু বিন্দু অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে; তা আলোচিত হয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়। সাহিত্যের সৃষ্টি নিজস্ব রূপে হলেও এর মধ্যে রয়ে যায় একটা নির্দিষ্ট সময়কার মানুষের লোককথা, সামাজিক রীতিনীতি, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, প্রথা ও মানুষের মতামত।

প্রকৃতি, ধর্ম, মনুষ্য জীবন—এসব মিলিয়েই সাহিত্যের শাখা সমৃদ্ধ হয়। ভরে উঠে সাহিত্যের নানা উপকরণের সমাহার। নানা বিশ্লেষণ, যুক্তি খণ্ডন আর মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় নতুন সাহিত্য, যা মানুষ মনে ধারণ করার চেষ্টা করে। চেষ্টা করে উপলব্ধি করার। সে থেকে আবার শুরু হয় বিতর্ক, বিশ্লেষণ আর বিবরণ লেখা। মানুষের উপলব্ধি হোক না হোক, এই মানুষ দিয়েই সাহিত্য, জীবন, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ইত্যাদি সমৃদ্ধ হয়। সবাই এর অংশীদারী না হলেও অনেকেই ভোগ করে, বলা যায় করতে পরিস্থিতি বাধ্য করে।

একনজরে
বই: আত্মঘাতী বাঙালী
লেখক: শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী
প্রকাশনী: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রা. লি.
প্রচ্ছদপট: সুব্রত চৌধুরী
প্রথম প্রকাশ: অগ্রহায়ণ ১৩৯৫
মূল্য: ১৫০ টাকা মাত্র

বন্ধু, নরসিংদী বন্ধুসভা