আমার বাবা

আমার বাবাছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় বাবার মুখে রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। গরমের সময় সারা রাত হাতপাখা ঘোরাতেন। আমার বাবা একজন দিনমজুর, রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তবে বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর করেন না।
প্রতিদিন সকালে বাবা কাজে চলে যেতেন আর ফিরতেন রাতে। আমরা অপেক্ষায় থাকতাম, কখন ফিরবেন। কাজ থেকে ফেরার সময় তিনি চাল, ডাল, সবজি কিনে আনতেন। তারপরই চুলায় আগুন জ্বলত। আর যেদিন অসুস্থতার জন্য বাবা কাজে যেতেন না, সেদিন অনেক কষ্টে অতিবাহিত হতো।

বাবা লেখাপড়া করেননি। এ কারণে মাঝেমধ্যে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দেখা গেল, তিনি ১০০ টাকার সদাই কিনলেন, দোকানি বাকির খাতায় ১২০ টাকা লিখে রাখছেন। আবার দেখা গেল, বাবা বাকির টাকা পরিশোধ করেছেন ঠিকই, কিন্তু দোকানি নাম কাটতে ভুলে গেছেন। ফলে ওনাকে জরিমানা দিতে হয়েছে। তারপরও তিনি কখনো আমাদের কষ্টে রাখেননি।

একদিন বাবা সকালে কাজে যান। বাড়িতে চাল বাড়ন্ত। মা বলেছেন সন্ধ্যার আগেই যেন চাল নিয়ে ফিরে আসেন। নয়তো সন্তানদের মুখে খাবার জুটবে না।

বাবা সারা দিন কাজ করেন, সন্ধ্যায় পারিশ্রমিকও নিলেন। বিপত্তি ঘটল বাজারে চাল কিনতে গিয়ে। রাজমিস্ত্রির কাজ করায় পোশাক সব সময় পরিপাটি থাকত না। কাজের দিন লুঙ্গি-গেঞ্জি পরতেন। টাকা রাখতেন লুঙ্গির ভাঁজে। তো বাজার থেকে সদাই কেনার পর ভাঁজে হাত দিয়ে দেখেন টাকা নেই। দোকানিকে বললেন, সদাইগুলো রাখেন, আমি একটু পরে আসতেছি। এটা বলেই অন্ধকার রাস্তায় হন্যে হয়ে টাকাগুলো খুঁজতে লাগলেন বাবা। খুঁজে পাননি আর।

আকাশে মেঘ করলে চারদিক যেমন অন্ধকার হয়; বাবার মুখের অবস্থাও তখন ঠিক তেমনি হয়ে গেল। বাড়িতে আসার পর দেখি ওনার চোখ ছল ছল করছে। আমাদের বুঝতে আর বাকি রইল না। সেই রাতে ঘরে থাকা কলা ও মুড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

বাবা আমাকে যেমন আদর করতেন তেমনি শাসনও করতেন। আমি একটু অসুস্থ হলে বাবা এখনো বৃদ্ধ বয়সে বিছানার পাশে সারা রাত জেগে থাকেন। যতক্ষণ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে না আসি, তিনি ঘুমান না। বসে থাকেন না খেয়ে। বাবা তুমি বেঁচে থাকো অনন্তকাল।

গাজীপুর