‘তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?’
আবিদের তৈরি ‘প্যারালাল ব্রিজ’ ডিভাইস থেকে শব্দটি এল। প্রথমে মনে হলো, ভুল শুনেছ সে।
‘আমি সায়রা বলছি।’
আবিদ একজন কোয়ান্টাম রিসার্চার। কয়েক মাস ধরে সে চেষ্টা করছে মানুষের মনের তরঙ্গ ও নিউরন কোড ব্যবহার করে অন্য আরেকটি পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার। ডিভাইস থেকে আসা ভয়েসের কোডের সঙ্গে ওর পৃথিবীর কারও মিল নেই। প্রতিদিন একই সময়ে ডিভাইস থেকে নতুন নতুন প্রশ্ন করা হয়। প্রাথমিকভাবে সে ধরে নিল, এটা অন্য কোনো ইউনিভার্সের পৃথিবী।
‘সায়রা, তুমি কেমন আছ? আমি আবিদ।’ আবিদ সংকেত পাঠায়।
সায়রা একজন লেখক। তার গল্পগুলো জীবনের সঙ্গে মিলে যায় বলে খুব অল্প সময়েই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়। বাবার অব্যবহৃত ওয়াকি–টকি থেকে একদিন কিছু শব্দ আসে। প্রতিদিন রাত দুইটায় ডিভাসটি অ্যাকটিভ হয়। প্রথমে ভয় পেলেও সায়রার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী হয়ে উঠল। আবিদের পৃথিবীর প্রযুক্তি অনেক আগেই সময়কে স্পর্শ করে ফেলেছে। চারপাশের হাইটেক প্রযুক্তির ভিড়ে সায়রার উপস্থিতি তার মনে নতুন এক অনুভূতি জন্ম নেয়। কিউরেটা বলল, এই অনুভূতিকে একসময় ভালোবাসা বলা হতো। নতুন অনুভূতিটাকে যত্ন করে মেমোরিতে রেখে দিল আবিদ।
আবিদ: একদিন তোমাকে আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে আসব। এখানে দুইটা চাঁদ ওঠে। একটা গোল সাদা চাঁদ, আরেকটা লাল।
সায়রা: তোমাদের পৃথিবীতে কি বৃষ্টি হয়?
‘বৃষ্টি কী?’
সঙ্গে সঙ্গে কিউরেটার স্ক্রিনে ভেসে উঠল বৃষ্টি পড়ার সুন্দর মুহূর্ত।
আবিদ অবাক হয়ে বলে, ‘এত সুন্দর হয় বৃষ্টি! কিন্তু আফসোস, আমাদের গ্রহে বৃষ্টি নেই, সূর্যাস্ত নেই। এক কৃত্রিম আলো চারপাশ ঘিরে রেখেছে।’
মৃদু হেসে সায়রা বলে, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস হলো বৃষ্টি। রিমঝিম শব্দে মনে এক সুর তৈরি করে।’
‘আমরা একদিন নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভিজব।’
আবিদ চেষ্টা করে একটা ওয়ার্মহোল জেনারেটর তৈরি করার, যা দিয়ে দুটো ইউনিভার্স সংযুক্ত করা যাবে। ডিভাইসটি তৈরি হয়ে গেলেও কাজ হচ্ছে না। কারণ, সায়রার পৃথিবী ৯৯২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।
‘আমার ভালোবাসা অন্য এক ইউনিভার্সে’ শিরোনামে সায়রার বইটি ২০০৭ সালের বইমেলায় বেস্টসেলার হয়। চারদিক থেকে অভিনন্দনবার্তা আসতে থাকে। শুধু আসেনি আবিদের। কয়েক দিন ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সন্ধ্যার আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে সায়রা বলে, ‘এই চাঁদ, আবিদের আকাশের দুইটা চাঁদকে বলো না, আমার সঙ্গে যেন সে যোগাযোগ করে। বলবে তো?’
বেশ কিছুদিন পর, কিউরেটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, কাছাকাছি আসবে ইউনিভার্স। কিছু সময়ের জন্য ইউনিভার্সগুলো পরস্পরের কাছাকাছি আসবে। তারপর আবার দূরে সরে যাবে। ‘প্যারালাল ব্রিজ’ ডিভাইসটি হাতে নিয়ে আবিদ সংকেত পাঠায়, ‘সায়রা, আমি আসছি।’
নির্ধারিত রাতে আবিদ যন্ত্র চালু করে। চারপাশে ঝলসে ওঠে নীলচে আলো। তার সামনের বাতাস কাঁপতে শুরু করে। একমুহূর্তে সে চোখে দেখে—অন্য এক নীলচে আকাশ আর দূরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ে, যার হাতে পুরোনো এক ওয়াকি–টকি।
আবিদ এগিয়ে যায়।
‘এক আকাশের নিচে’—লেখক আবিদ সায়রা রহমান। ২০০৮ সালের বইমেলায় বইটি বেশ পাঠপ্রিয়তা অর্জন করে। বইটির প্রচ্ছদের মতোই সায়রা এখন আবিদের হাত ধরে আছে। এক আকাশের নিচের চাঁদের আলো এসে পড়ছে তাদের ওপর।
বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা