প্রতিকূল পরিবেশে অটল ও সৎ থাকার উৎসাহ জাগায় ‘টুয়েলভথ ফেল’

‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার দৃশ্যআইএমডিবি

সম্প্রতি বিনোদনজগতে আলোড়ন তুলেছে বলিউডের ‘টুয়েলভথ ফেল’ মুভি। মুভিটি ভারত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর মধ্যে দারুণভাবে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা গল্পের মূল উপজীব্য।

আইপিএস কর্মকর্তা মনোজ কুমার শর্মাকে নিয়ে ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠকের উপন্যাস ‘টুয়েলভথ ফেল’ অবলম্বনে মুভিটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা বিধু বিনোদ চোপড়া। সিনেমার গল্পে দেখা যায়, ভারতের চম্বল এলাকার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের তরুণ মনোজ কঠিন জীবনসংগ্রাম চালিয়ে আইপিএস কর্মকর্তা হয়েছেন। মনোজের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি।

দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি ছাড়া সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন মনোজ। মূলত সেখান থেকেই মুভির নামকরণ করা হয়।

মুভিটির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, হার না মানার মানসিকতা ও সততার সঙ্গে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা।

মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র মনোজ। গরিব পরিবারের ছেলে। মনোজের বাবা চাকরি হারায় তার সততার জন্য। নিজের চেষ্টাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যায় মনোজ। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বসলেও সে অকৃতকার্য হয়। মনোজদের বিদ্যালয়ে চিরকালই পরীক্ষায় নকল করা একেবারে প্রথায় পরিণত হয়েছিল। শিক্ষকেরা বারণ করত না। কারণ, তারা চাইত স্কুলটা চলুক। কিন্তু যে বছর মনোজ পরীক্ষায় বসে, একজন সৎ পুলিশ অফিসার বিষয়টি ধরে ফেলে। পরীক্ষায় নকল বন্ধ করায় অকৃতকার্য হয় মনোজ। সেই ঘটনা ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের মোড়।

ওই পুলিশ অফিসারের মতো হওয়ার ইচ্ছা জাগে মনোজের মনে। পুলিশ অফিসার মনোজকে বলে, তার মতো হওয়ার জন্য মনোজকে ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অফিসারের কথা শুনে পরের বছর আবারও সেই স্কুলে নকল চালু হয়ে যায়। কারণ, সেই ডিএসপি ট্রান্সফার হয়ে যায়। কিন্তু মনোজ নকল না করে নিজের মতো পরীক্ষা দিয়ে থার্ড ডিভিশনে পাস করে। এরপর সে শহরে যায় ডিএসপি হওয়ার জন্য। কিন্তু বাসেই তার টাকা হারিয়ে যায়। শহরে এসে প্রীতম নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।

মনোজ প্রীতমের সঙ্গে দিল্লি যায় এবং সেখানে গিয়ে গৌরী নামের এক লোকের কোচিংয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু তার কাছে টাকা না থাকায় সে ঘর মোছা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করে আর রাতে গিয়ে পড়াশোনা করে। এভাবে চলতে চলতে প্রথম বছর মেইনস-এ ফেইল করে সে। তারপরও হাল ছাড়ে না।

মনোজ রাতদিন মিলিয়ে মাত্র ৬ ঘণ্টা একটা ছোট রুমের মধ্যে পড়াশোনা করে আর বাকি সময় আটা ভাঙার কাজ। আয়ের টাকা পরিবারের কাছে পাঠায়। গৌরী ভাইয়া মনোজকে ছোট্ট খুপরি থেকে বের করে তার বাড়িতে জায়গা দেয়। গৌরী ভাইয়ার বাড়িতে থেকে পুরো এক বছর মন দিয়ে পড়াশোনা করে। তারপর সব ধাপ পেরিয়ে ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়।

মুভিতে দেখার, শেখার ও উপলব্ধি করার বেশ কয়েকটি পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। মানুষের জীবনে অন্ধকার সময় আসতেই পারে। মনে হতে পারে জীবনে আর কিছুই সম্ভব নয়, সব শেষ। কিন্তু সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য হয়েও মনোজ আইপিএস অফিসার হতে পেরেছিল।

অনেকে অন্তিম পর্যায়ে এসে হাল ছেড়ে দেয়, কিন্তু সততা ধরে রাখলে প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশ শেষে একসময় অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবেই। মনোজের বাবা সততা ও ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে চাকরিচ্যুত হয়েছিল। কিন্তু সে একসময় সততার পথ থেকে সরে আসতে চায়; কিন্তু মনোজ অটল থাকে এবং সফল হয়।

আমাদের মধ্যে অনেকে আছে, যারা অভাবের জন্য লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। তাদের জন্য মনোজ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মনোজ দাদির দেওয়া অর্থ নিয়ে পড়াশোনা করতে শহরে যায়। পথে ব্যাগ হারিয়ে ফেলে। এতে মনোজ ভেঙে না পড়ে, খেয়ে না খেয়ে আবার শূন্য থেকে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সফল হয়।

মুভিটির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, হার না মানার মানসিকতা ও সততার সঙ্গে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। ভাইভা বোর্ডে কড়া কড়া প্রশ্নের মুখেও সৎ সাহস নিয়ে জবাব দেয় মনোজ। ভাইভা বোর্ড মনোজকে জিজ্ঞেস করে, আপনি শেষবারেও যদি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ব্যর্থ হন, তবে কী করবেন? জবাবে মনোজ বলে, ‘হার নেহি মানুঙ্গা, রার নেহি ঠানুঙ্গা।’ আইপিএস হওয়া আমার লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য দেশকে সংস্কার করা। আইপিএস না হলে গ্রামে গিয়ে শিক্ষক হব। শিশুদের শেখাব, প্রতারণা করা ছাড়তে হবে। ওই বয়সে ওরা এটা শিখে গেলে জীবনে আর কোনো দিন ঠকানোর পথে যাবে না।

সহসভাপতি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা