প্রিয় বাবা, তোমাকে খুব ভালোবাসি

প্রিয় বাবা, তোমাকে খুব ভালোবাসিছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালে অমর একুশে বইমেলায় আমার সম্পাদিত একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রকাশনী থেকে একদিন আমন্ত্রণ আসে লেখক সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। এ জন্য ঢাকায় যেতে হবে। আমরা থাকি চট্টগ্রামে। তৎক্ষণাৎ বাবাকে ফোন দিয়ে সংবাদটি জানালে তিনি খুশি হন। বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ, আমি ছুটি নিয়ে তোমার সঙ্গে যাব।’ এই কথা শুনে আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেল।

একদিকে লেখালিখির সুবাদে জীবনে প্রথম কোনো সম্মাননা পেতে যাচ্ছি, আরেক দিকে একজন বাবা তাঁর ছেলের প্রতিভার প্রথম প্রাপ্তি নিজ চোখে দেখবেন, ভাবতেই কেমন অবিশ্বাস্য লাগছিল! বাবার অফিস বান্দরবানে। দুই দিন পরই ছুটি নিয়ে চলে এলেন চট্টগ্রামে।

পরের দিন সকালে ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। বেলা একটায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাই। ওই দিন পাশেই একটি হোটেলে অবস্থান করি। তারপরের দিন ছিল শুক্রবার। আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাশতা সেরে ফেলি। দুপুরের খাবার শেষে রিকশাযোগে অনুষ্ঠানস্থলে যাই।

লেখক সম্মাননা অনুষ্ঠান প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে। দেশের স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিকসহ আমার সমবয়সীও অনেকে আসেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষের একপর্যায়ে আমাদের সবাইকে সম্মাননা দেওয়া হলো। প্রধান অতিথির হাত থেকে যখন পুরস্কার গ্রহণ করছিলাম, বাবা তখন সেই ছবি নিজের মোবাইলে ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন। এই দৃশ্য দেখে খুশিতে চোখ ছলছল করে ওঠে।

বাবাকে আমি যেমন অনেক ভালোবাসি, তেমনি খুব ভয়ও পাই। এই ভয় সম্মানের। মানুষটা একটু মেজাজি স্বভাবের হলেও খুব সহজ-সরল। আমার অর্জনে বাবা আমাকে নিয়ে সব সময় গর্ববোধ করেন। এখনো মাঝেমধ্যে ওনার মুখে পরিচিতজনদের কাছে বলতে শুনি, ‘আমার ছেলে আবার কবি, লেখক। সে খুব ভালো কবিতা আবৃত্তিও করে।’ বাবার মুখে কথাটি শুনতে অনেক শ্রুতিমধুর লাগে!

বাবার বয়স বাড়ছে, সেই সঙ্গে অসুস্থতাও। খোদার কাছে প্রার্থনা, এই অসুস্থতার পরীক্ষাগুলোতে বাবা যেন সব সময় উত্তীর্ণ হন, সুস্থ থাকেন। ওনার মতো যেন আমিও একজন সৎ, আদর্শবান ও ভালো মানুষ হতে পারি। প্রিয় বাবা, তোমাকে খুব ভালোবাসি।

বন্ধু, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা