তোমার মতো হতে চাই

তোমার মতো হতে চাইছবি: সংগৃহীত

প্রিয় বাবা,
তুমি আমার জীবনের প্রথম বীরপুরুষ। তিন বোন জন্মের পর পরেরবার যখন মা শুনলেন যে আবারও মেয়ে হবে, তখন সবাই মন খারাপ করে বসেছিল। তুমি নাকি বলেছিলে, ঘর আলো করে আমার মা আসছে। সেদিন তোমার খুশি দেখে মা শান্তির নিশ্বাস ফেলেছিল।

আমার সবকিছুর পেছনে বড় গল্পের নাম তুমি। যেদিন বলেছিলে, ‘তোর গোমড়া মুখ দেখলে আমার কষ্ট লাগে, কান্না পায়। অন্তত আমার সামনে এমন করে থাকিস না মা’, সেদিনই বুঝেছিলাম আমি তোমার কতটা জুড়ে রয়েছি। শরীরে অসুস্থতা নিয়েও কাজ করছ আমাদের দুমুঠো খাওয়াবে বলে। জানো বাবা, যেদিন বান্ধবীর বাবা মারা গেল, বুকের ভেতর প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। একা একা লাগছিল। মনে হচ্ছিল, এক দৌড়ে তোমার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি, ‘বাবা, আমার আগে তুমি পৃথিবী ছেড়ে যেয়ো না, আমি বাঁচতে পারব না, একা হয়ে যাব।’

তুমি আমার প্রথম খেলার সাথি। এই যে কিছুদিন আগেও পরীক্ষার সময় তুমি আমাকে স্কুলে দিয়ে এসেছ, আবার পরীক্ষা শেষে নিয়ে গেছ। পরীক্ষা শেষ হলে তুমি আইসক্রিম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। আমার মনে এই বিশ্বাস জন্ম নেয় যে তুমি সঙ্গে না গেলে আমার পরীক্ষা খারাপ হবে। কত গল্প, কত আড্ডা তোমার সঙ্গে। তোমার মতো মন ভালো করার জাদুকর আর দুটো নেই পৃথিবীতে। জানো বাবা, সময় আজ আমাদের দুজনকে দুই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। তাই ইচ্ছা হলেও তোমার কাছে ছোটবেলার মতো থাকতে পারি না।

এখনো মনে আছে, কত রাত পর্যন্ত আমরা উঠানে বসে গল্প করতাম; তুমি গান শোনাতে। জানো বাবা, খুব মিস করি সেই দিনগুলো। ক্লাসে যেদিন স্যার বলেছিল, ‘এমন কেউ কি আছ, যার ওপর তাঁর মা–বাবা সন্তুষ্ট’, আমি দাঁড়িয়েছিলাম। কারণ ছিলে তুমি বাবা।

আমার সাফল্যের জন্য যেমন সবচেয়ে খুশি হতে তোমায় দেখেছি, তেমনি দেখেছি আমার কষ্টে তোমায় কান্না করতে। বাবা, তুমি আমার জীবনের অমূল্য রতন। আমি যদি হাজার বারও এই পৃথিবীতে জন্ম নিই, তোমাকেই সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার বাবা বলে চাইব। আমার আলোর পথের দিশারি তুমি। তোমার মতো হতে চাই। কখনো আমায় কোনো কাজে বাধা দাওনি। শুধু বলেছ, ‘বড় হচ্ছ, যা খুশি করো। তবে এমন ভুল কোরো না, যেটা তোমার জীবনকে নষ্ট করে দেবে।’ বাবা, তোমার প্রতিটা উপদেশই আমার জীবনের পথচলার পাথেয়।

ইতি,
তোমার মেয়ে