সখী

মায়ের সঙ্গে লেখকছবি: লেখকের সৌজন্যে

মাকে আমি সখী বলেই ডাকি। ওনার বয়স খুব বেশি নয়। মায়ের পুরো জীবনটা জ্ঞান, দর্শন, শিল্প ও শিক্ষানুরাগে ভরা। সেই অনুরাগের সব আলো দিয়ে তিনি আমাকে সাজিয়েছেন। আমার প্রতিটি লেখার প্রথম পাঠক হন মা। যা অন্য কেউ বোঝে না, আমার অষ্টম শ্রেণি পাস মা সহজেই বুঝে যান।

আমিও হয়তো গ্রামের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই জন্ম নিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সংসার বেঁধে, বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে বিদায় নিতাম দুনিয়া থেকে। তেমনটি না হয়ে আমিও মেয়ে হয়েছি ঠিকই, প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে এখন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে চলেছি। হয়ে উঠছি একজন লেখক, দার্শনিক মনোভাবের মানুষ, ভ্রমণপিপাসু, নীতি-নৈতিকতা ও মায়ের আদর্শের অনুরূপ আত্মার অধিকারী। মায়ের পায়ে যে শিকল ছিল, সেই শিকল ছিঁড়েই তিনি আমাকে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের জন্য তীক্ষ্ণ চোখের শিকারি ঈগল হিসেবে। মা একটা কথাই বলেন, ‘চেষ্টা করে যাও, ভয় পেয়ো না, বিশ্বাস রাখো যে তুমি পারবে।’এখন বিশ্বাস করি, যত ঝড়ই আসুক, আমিও পারব ইনশা আল্লাহ।

দুনিয়ার যেখানেই ফুল পান, মা আমাকে এনে দেবেনই। আমার গান শুনবেন, আবৃত্তি শুনবেন। এমন সখীই আমাকে আলো হতে শিখিয়েছেন।

মনে পড়ে, জীবনের প্রথম চাকরি ছিল শোরুমে। সেখানে আমার কাজের বাইরেও আমাকে দিয়ে শোরুম ঝাড়ু দেওয়ানো, সোফা মোছানো ও চা আনার কাজ করানো হতো। আমি কেঁদেছিলাম, বলেছিলাম সব মাকে। মা বলেছিলেন, কাজ কখনো ছোট হয় না।

এই যে উন্নত মন, মনন, চিন্তা আর ইতিবাচকতায় পূর্ণ মানুষ আমার মা। তিনিই বৃক্ষের মতো আমাকে আগলে চারা গাছ ও সয়ে রয়ে গিয়ে বৃক্ষ হওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন। তাঁকে ভালোবাসি, তবে অপারগ আজও দায়িত্ব পালনে। তাঁর অকালে বাড়া বয়স, কালো চুল সাদা হওয়া, স্বাস্থ্যহানি যেন আমার জীবনের চরম দুর্ভিক্ষের মতো আমাকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এক আকাশ আক্ষেপে।

বন্ধু, সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভা