রিলস যেভাবে আমাদের ক্ষতি করছে

এই যুগের অনেকেই রিলস দেখার পেছনে প্রচুর সময় অপচয় করেনরয়টার্স

আজকাল রাত ১০টার পর বন্ধু বা পরিচিত কাউকে নক দিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কী করছিস? অধিকাংশই জবাব দেয়, রিলস দেখি। আবার বন্ধুদের মধ্যেও চলে রিলস আদান-প্রদান। শুধু যে রাতে বা ঘুমানোর আগে রিলস দেখা হয়, তা কিন্তু নয়; দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার যখনই সময় পাওয়া যায়, তখনই রিলস দেখতে ইচ্ছা করে। ৩০-৫০ সেকেন্ডের ভিডিওগুলো আমাদের এতটাই আকৃষ্ট করে যে কীভাবে সময় নষ্ট হয়, আমরা বুঝতে পারি না!

রিলস যেভাবে দর্শককে ফাঁদে ফেলে
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে রয়েছে রিলস, ইউটিউবে শর্টস। আলাদা নাম হলেও দুটি জিনিস একই। কনটেন্টগুলো হয় খুবই আকর্ষণীয়।

ধরুন, আপনি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম ফিড স্ক্রল করছেন, হঠাৎ একটা সুন্দর রিলস দেখলেন। সঙ্গে সঙ্গেই সেটিতে ক্লিক করলেন, ভালো লেগে গেল। সেটি দেখা শেষে পরের রিলসে গেলেন, এভাবে ধারাবাহিকভাবে একটার পর একটা রিলস দেখতেই থাকলেন। কনটেন্টগুলো আনন্দদায়ক হওয়ায় আপনিও মজা পেয়ে গেলেন। এভাবে নিজের অজান্তেই কখন যে ফাঁদে পড়ে গেলেন, বুঝতেই পারেননি।

কাজের সময় নষ্ট করে দেয়, মনোযোগও নষ্ট করে। এতে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমে যায়, ধৈর্য কমে যায়।

ফাঁদ যেমন হয়
আপনি রিলস দেখেন কখন? কাজের ফাঁকে, অবসর সময়ে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে? অধিকাংশ মানুষই এই সময়টায় বিনোদনের জন্য রিলস দেখেন। ধরুন, রাত ১২টায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় গেলেন। সকালে আবার ক্লাস বা অফিস আছে। ভালো ঘুম দরকার। হঠাৎ মনে হলো, একটু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ঘুরে আসি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারার পর রিলস দেখা শুরু করলেন এবং একটার পর একটা দেখতেই থাকলেন। তারপর যখন ঘুমানোর কথা আবার মনে পড়ল, তখন দেখলেন এক-দুই ঘণ্টা সময় এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তার মানে আপনার পর্যাপ্ত ঘুম হবে না, যার প্রভাব পড়বে পরের দিন কাজে গেলে।

আবার কেউ কেউ অফিস চলাকালে কাজে বিরক্তি এসে গেলে মাইন্ড রিফ্রেশ করার জন্য রিলস দেখেন। এটাও কাজের সময় নষ্ট করে দেয়, মনোযোগও নষ্ট করে। এতে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার ক্ষমতা কমে যায়, ধৈর্য কমে যায়।

কেন আমরা রিলস দেখায় মজে থাকি
যখন আমরা খাবার খাই, যখন কেউ প্রশংসা করে কিংবা কোনো ব্যক্তিগত অর্জন হয়; তখন আমাদের মস্তিষ্ক ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ করে। ডোপামিন হরমোন মানুষের মধ্যে শান্তি ও তৃপ্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে। পাশাপাশি ব্রেন, মানসিক অবস্থা, মনোযোগ ও ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ যখন রিলস দেখেন, তখন তাঁর মধ্যেও ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ হয়। তাই রিলস দেখাটা নেশার মতো হয়ে যায়।

ইনস্টাগ্রামের রিলস ভিডিও অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে
ইনস্টাগ্রাম

আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, আজকাল মানুষের মুভি দেখায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অনেকেই এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মত জানাচ্ছেন। বই পড়ায়ও আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অবসর সময়ে আগে যাঁরা বই পড়তেন বা মুভি দেখতেন, তাঁরা এখন ওই সময়টায় রিলস দেখছেন! দীর্ঘ সময় বসে মুভি দেখা বা বই পড়ার মতো ধৈর্য পাচ্ছেন না তাঁরা।

উত্তরণের উপায়
রিলস দেখায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এটা দেখতে গিয়ে যেসব ক্ষতি হচ্ছে, সেটা সমস্যা। এই নেশার ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসতে হলে নিজের প্রতি সচেতন হতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করা জানতে হবে।

যেমন অবসর সময়ও নিজেকে ঠিক অবসর রাখা যাবে না। বই পড়া, শরীরচর্চা, রান্না করা, ঘরের বিভিন্ন কাজ করাসহ নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা কম সময় দেওয়া যায়, ততই ভালো।

অনেকের সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজ থাকে। কেউ কেউ অসংখ্য ফেসবুক বা মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত থাকেন। এসবের কারণে নোটিফিকেশনও বেশি আসে। বারবার সেই নোটিফিকেশন চেক করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারতে হয়। চেষ্টা করতে হবে অপ্রয়োজনীয় সব গ্রুপ বা কার্যক্রম থেকে বের হয়ে আসতে। এতে নোটিফিকেশন আসা কমে যাবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার ঢুঁ মারারও প্রয়োজন পড়বে না।