কনকনে শীতে বন্ধুত্বের জয়

ম্যাজিক বক্সের রং পরিবর্তন হলেও সবার নজর সেদিকেইছবি: আশফাকুর রহমান

কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের ভোরে আরামপ্রিয় কম্বলের উষ্ণতাকে উপেক্ষা করে দুই ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাইকে করে বের হই। কুয়াশা এত বেশি যে দূরের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছিল। গতিসীমা ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখতে হচ্ছে। সকাল সাতটায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাতে ৭টা ২৫ মিনিট বেজে যায়।

আমাদের জন্য নির্ধারিত ‘এমভি নিউ সাব্বির ৩’ লঞ্চের কাছে যেতেই দেখি, দূরদূরান্ত থেকে আগত বন্ধুরা একে অপরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। বেশ অবাক হলাম! দিনাজপুর, পঞ্চগড়, খুলনা থেকে বন্ধুরা আমাদের আগেই এসে উপস্থিত। অথচ কেরানীগঞ্জে বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের আসতে দেরি।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর, প্রথম আলো বন্ধুসভার বার্ষিক সভা ও আনন্দ আড্ডা ‘এসো মিলি জলধারায়’ অংশগ্রহণের গল্পের শুরুটা আমার এভাবেই হয়। সারিবদ্ধ হয়ে বন্ধুরা লঞ্চে প্রবেশ করেন, এরপর নাশতা ও পরিচয় পর্ব। কেউ কেউ এরই মধ্যে ছবি তুলে সেই গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে দিচ্ছেন। যেন এটাই প্রথম কাজ। সকাল নয়টায় চাঁদপুর তিন নদীর মোহনার উদ্দেশে আমাদের বহনকারী লঞ্চটি যাত্রা শুরু করে।

এ এক অন্যরকম প্রশান্তি। কুয়াশার চাদর ভেদ করে লঞ্চ এগিয়ে চলছে। রেলিংয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। নদীর ঠান্ডা হাওয়া গায়ে এসে লাগছে। এদিকে এরই মধ্যে নিচতলায় শুরু হয়ে গেছে সাংস্কৃতিক পর্ব। কেউ নাচ করছেন, কেউ গান শোনাচ্ছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে চলছে র‌্যাফল ড্রয়ের লটারি বিক্রয়। বন্ধুরা সামনে এসে নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করছেন। এক ফাঁকে ঘোষণা করা হয় ‘বর্ষসেরা ১০ বন্ধুসভা’ ও বৃক্ষরোপণে সেরা ১০ বন্ধুসভার নাম। জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে তাদের সম্মানিত করা হয়।

আড্ডায় আড্ডায় কখন যে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ক্ষুধাও লেগেছে। কুয়াশার কারণে লঞ্চ ধীরে চলায় চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছাতে বিকেল চারটা বেজে যায়। সেখানে ফুল দিয়ে আমাদের বরণ করে নেয় চাঁদপুর বন্ধুসভা বন্ধুরা ও চাঁদপুর সরকারি শিশু পরিবারের শিক্ষার্থীরা। দুটি ঘোড়া ও ব্যান্ড পার্টির চমৎকার বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বন্ধুবরণ করে নেওয়ার দৃশ্যও এখনো রোমাঞ্চিত করে।

ইলিশের রাজ্যে গিয়ে ইলিশ খাব না? তা কি হয়। পোলাওয়ের সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা, মুরগির রোস্ট, ডাল, সবজি—জম্পেশ একটি ভোজ হলো। চাঁদপুরের বন্ধুদের আপ্যায়ন ছিল অতুলনীয়। কিছুক্ষণ খুনসুটি আর ছবি তোলা শেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে আবারও ঢাকার উদ্দেশে রওনা। নদীর বুকে ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তবে বন্ধুদের মধ্যে অন্ধকার নামেনি। তাঁরা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন। ফেরার পথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফল ড্র সন্ধাটাকে আরও মোহনীয় করে তোলে। র‌্যাফল ড্রয়ে বিজয়ীদের জন্য থাকে চমকপ্রদ সব উপহার। তবে ১৫টি লটারি কিনে একটিতেও পুরস্কার পাইনি। বন্ধুরা পেয়েছে এতেই খুশি।

জাতীয় পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় বলেছিলেন, সব বন্ধু একসঙ্গে হওয়ায় এটাই সুবর্ণ সুযোগ; অন্তত ১০০ জন নতুন বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করার। আমার মতো অনেকেই সেদিন অনেক নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হই। একটিবারের জন্যও মনে হয়নি সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ আছে। সবাই যেন একই পরিবারের সদস্য। দারুণ একটি উৎসবমুখর দিন অতিবাহিত শেষে রাত ১০টার পর ঢাকায় ফিরে আসি। তারপর যে যার গন্তব্যে। আবারও দেখা হবে এমনই কোনো একদিনে।

সাধারণ সম্পাদক, কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা