চোর

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘চোর ধরা পড়েছে, চোর।’ দুপুরে ভাত খেয়ে বিছানায় খানিক গা এলিয়ে দিয়েছিলাম। চিৎকার শুনে উঠে যেতে হলো। কান খাড়া করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। ঘটনা কী, তা দেখার জন্য বিছানা ছেড়ে বাইরে এলাম। চোর ধরা পড়েছে পাশের বাড়ি। সেদিকে ছেলেপুলের দল যাচ্ছে। ওদের কাছ থেকে জানলাম, চোরের নাম রাসু চোরা। সে নিজেই নাকি নাম বলেছে। তবে আসল নাম বলেনি বলেই উপস্থিত সব বিজ্ঞজনের ধারণা।

সেখানে পৌঁছে দেখলাম পাড়ার ছেলে-বুড়োর জটলা। রাসু চোরাকে শক্ত করে একটা গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়েছে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। তাঁকে পেটানোর পর্ব চলছে। যার বাড়ির জিনিস চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে, তিনিই সামনে। রাসু চোরা তাঁদের বাড়ির গেটের টিন ভেঙে এক জায়গায় একত্র করছিল।

পাশেই দেখলাম, পুরোনো মরিচা পড়া টিনের ছোট-বড় কয়েকটি টুকরা পড়ে আছে। এসব শুনতে শুনতেই চোরকে মারের আরও কয়েকটি দৃশ্য মঞ্চায়িত হলো। মার খেয়ে রাসু চোরা কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না। শুধু কোঁত টাইপের শব্দ বেরোচ্ছে মুখ থেকে। চোখ দুটি টকটকে লাল হয়ে গেছে। যদিও এক ফোঁটা জল বের হয়নি। পুরুষ মানুষের এই এক দোষ। চোখ দিয়ে সহজে জল বের হয় না। কয়েকজন অতি উৎসাহী হয়ে আমাকেও বলল চোরকে কষে দু-চারটা লাথি মারতে। আমি লাথি মারতে গিয়েও থমকে গেলাম। কয়েক টুকরা টিন চুরির অপরাধে তাকে এত মারধর করা যায় না। আমার বিবেকে বাধল। সেই সঙ্গে একটা প্রশ্ন এল মনে। সামান্য কয়েক টুকরা পুরোনো টিন চুরির অপরাধে যদি এভাবে মারধর করা হয়, তাহলে যারা দেশের শত শত কোটি টাকা চুরি করছে, তাদের জনগণ এভাবে ধরলে কী অবস্থা হবে? চোখের সামনে দৃশ্যপট ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল!