নীরব চিৎকার

অলংকরণ: আরাফাত করিম

শহরের দেয়ালে দেয়ালে নীরব চিৎকার
রক্তের ছোপ, ভাঙা স্বপ্ন, ছেঁড়া ওড়না,
আকাশ জানে, বাতাস বোঝে, চাঁদ জানায়
তবু পৃথিবী নির্বিকার!
রাত গভীর হলে ওত পেতে থাকে অন্ধকার,
পথেরা থমকে যায়, বাতিগুলো নিভে যায়,
আর একজোড়া অসহায় চোখ—
শেষবারের মতো আকাশ দেখে,
তারারা তখনো জ্বলছিল,
কিন্তু তারা তো কথা বলে না!

তারপর সব ঝড়ের মতো ঘটে যায়—
নখর-দাঁতের দাগে আঁকা হয় এক অসম যুদ্ধের ইতিহাস,
প্রতিবাদের শব্দগুলো ফেঁসে যায় শ্বাসনালিতে,
একটি শরীর হয়ে যায় নিস্তব্ধ পাথর।
ভোর আসে, পাখিরা ডাকে,
কিন্তু সে ফিরে যায় না আর আগের মতো
ছেঁড়া ওড়না গাছের ডালে ঝুলে থাকে,
স্যান্ডেল পড়ে থাকে ধুলার মধ্যে,
গল্প পড়ে থাকে ফেসবুকের স্ট্যাটাসে,
আর বিচার—
বিচার পড়ে থাকে আদালতের ফাইলচাপায়!
অপরাধী দিব্যি হাসে টেলিভিশনের ক্যামেরায়,
চায়ের কাপে তর্ক জমে—
‘মেয়েটার দোষও ছিল না?’
‘রাত করে বেরোবে কেন?’
‘ওড়নাটা ঠিকমতো পরলে তো...’

তারা কেউ বলে না—
‘একটা মানুষ ধর্ষক হয়ে জন্মায় না!’
যতবার কোনো শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়,
একটা সভ্যতা আরও খানিকটা মরে যায়।
তবু আমরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকি,
শুধু সমাজ চুপ থাকে না,
সে বিচার করে—
ধর্ষকের নয়,
ধর্ষিতার!
কিন্তু একদিন,
নীরব চিৎকার গর্জন হয়ে উঠবে,
একদিন,
ছেঁড়া ওড়নার ফাঁক দিয়ে বিদ্রোহ উড়ে যাবে বাতাসে,
সেদিন—
এই দেয়াল ভাঙবে, এই বিচার জাগবে,
আর সভ্যতা নতুন গল্প লিখবে,
যেখানে কোনো শরীর
কখনো আর পাথর হবে না!