বটবৃক্ষ

অলংকরণ: আরাফাত করিম

এই তো সেদিন, ঝড়ের আঘাতে ঢলে পড়ল পাহাড়তলি গ্রামের সৌন্দর্যের তীর্থ ছোঁয়া। ঠনঠন করে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভিন্নরূপী বটবৃক্ষ। মনে হয় যেন গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে একাই। নেই কোলাহল, নেই কারও সাম্যতার প্রতিধ্বনি। তবু যেন নিজে নিজেই আছে এক ভিন্নরূপী সত্তা হয়ে। নেই হাজার জনতা, নেই অবিশ্বাসের ছোঁয়া। তবু যেন নিজেকে মনে করছে ব্যস্ততার এক প্রবল ছায়া।

আজ সেই ঠনঠন করে দাঁড়িয়ে থাকা ভিন্নরূপী বটবৃক্ষের পাশে কেউ নেই। কিন্তু একদিন ছিল, যেদিন মানুষ গরমে তপ্ত হয়ে একটু প্রশান্তি পেতে ছুটে আসত হাজার ব্যস্ততা ছেড়ে। যেদিন মানুষ ক্ষিণপদস্থ পায়ে সংগীতের তালে নেচেছিল এ বৃক্ষ ছায়ার তলে। সেদিন এ বৃক্ষ ছায়া পেত তার নিজস্ব প্রশান্তি, মাটি তার রক্তিম আদলে খুঁজে পেত সবুজতার সুখ।

যদি আবার তারা আসে। যদি আবার এই নিঃসঙ্গের পাশে কেউ মাথা রেখে নিদ্রা জ্ঞাপন করে। এই ভেবে অবিরাম ছায়া দিয়ে যায় বটবৃক্ষ। কিন্তু এ যেন অরণ্যে রোদন। দিনে দিনে বটবৃক্ষের দিন শেষ হয়ে এল। এক দিন, দুই দিন, এমনি দীর্ঘসূত্রতায় পুরোপুরি অক্কা পেল বটবৃক্ষটি। আবার শুরু হলো নতুন আয়োজন। কেঁচেগণ্ডূষ হলো শত শত মানুষের আনাগোনা, শুরু হলো আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া কিছু ভদ্র সমাজের বসবাস। কিন্তু কেউই সেই অক্কা পাওয়া বটবৃক্ষের দিকে লক্ষ্যই করে না; বরং বৃক্ষটিকে কেটে ফেলার হুকুম করলেন গ্রামের বড়দাদা।

হঠাৎ এক অপরিচিত সন্ন্যাসী এল পাহাড়তলিতে। কাউকে সে চেনে না, আর কোনো মানুষও তাকে চেনে না। শুধু চেনে এক অজানা সত্তাকে। যার পাতার লালসায় কামাল মিয়ার ছাগিটি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চেটে নিত বারবার। সে পাতা আজ কোথায়! তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না বটবৃক্ষটি নেই।

তাই তিনি বৃক্ষের নিচেই বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন। শুরু করলেন মরা গাছের পরিচর্যা। মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকল। তারা সবাই সন্ন্যাসীকে পাগল বলে সম্বোধন করতে থাকে। দিন কয়েক পর গ্রামের বড়দাদার আদেশে বের করে দেওয়া হলো বৃক্ষবন্ধু পাগলটিকে। তবু থেমে রইল না তার চুপিসারে গাছের পরিচর্যা। একদিন কামাল মিয়ার ছাগিটি আবারও পাতার ঘ্রাণে বৃক্ষটির নিচে এসে দাঁড়িয়ে!