মানুষই নাম দিয়েছিল ‘সুরের দয়াল রায়’

ভৈরবী গীতরঙ্গ দলের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হলো গীতিনকশা ‘সুরের দয়াল রায়’ছবি: রাইন চৌধুরী

শিল্পকলা খুব করে টানে। এখানে অদৃশ্য এক মায়া আছে। সুর আছে। স্নিগ্ধতা আছে। সেদিন ফেসবুকে একটা আমন্ত্রণপত্রের ছবি সামনে এলো, ‘ব্যস্ত নগরীর কোলাহল ভুলে চলে আসুন ভিন্নধর্মী এক স্নিগ্ধ আয়োজনে’।

যাওয়ার জন্য এর চেয়ে বড় বাহানা মনে হয় আর কিছু দরকার পড়ে না। শিল্পকলার হল ভুলে যাওয়া আমার বরাবরের অভ্যাস। একজনকে জিজ্ঞেস করে নতুন রঙের গন্ধ ভেসে আসা সিঁড়ি দিয়ে শিল্পকলার এক্সপেরিন্টাল হলে ঢুকেছি যখন তখন সন্ধ্যা সাতটার একটু বেশি। চুপচাপ বসে আছে সবাই। এক–দুজন নয়, অনেকজন। বেশ অবাকই হয়েছি, গানের প্রোগ্রামেও এতজন আসে নাকি! মঞ্চে একজনের ছবি, যিনি লিখেছিলেন ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। এই গান আমার ভীষণ ভালো লাগে।

মঞ্চে সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা শেষে মূল পরিবেশনা শুরু হয়। গান, কবিতা, নৃত্য, আবার কখনো কিছু কথামালা। একটু একটু করে বলা হচ্ছিল তাঁর সম্পর্কে। কে ছিলেন তিনি, কী করে গেছেন, তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা। সঙ্গে আলোছায়া আর সুরের খেলায় মঞ্চ যেন জীবন্ত ছিল পুরোটা সময়। পুরোটা সময় জানতে থাকলাম বাংলা গানের পঞ্চ-স্থপতির একজন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে। উপভোগ করতে দেখেছি সবাইকে। কেউ গানের সুরে গা দোলাচ্ছে, কেউ আবার ঠোঁট মেলাচ্ছে, মাথা নাড়িয়ে মিশে যাচ্ছে নৃত্যের সঙ্গে। কখনো আবার হাস্যরসে মজেছে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছি পুরোটা সন্ধ্যা।

নাট্যকার, কবি ও গীতিকার—এসব পরিচয় বাদে তিনি যে সাচ্চা দেশপ্রেমিক, মানবদরদি, সেসব বলার উপেক্ষা রাখে না। তাঁর গান–কবিতায় উঠে এসেছে দেশপ্রেমের কথা, দেশের কথা। তিনি রসিক মানুষ হিসেবেও সমাদৃত ছিলেন। রসিকতার মধ্যে মোক্ষম জবাব দিতে ছাড়তেন না। একবার তো এক ইংরেজ সাহেবকে কথা প্রসঙ্গে বলে উঠেছিলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে শয়তান তুমিই বটে!’ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মুখে এমন উত্তর শুনে ওই জায়গায় উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠল। আর সেই সাহেব বাঙালিদের সামনে এভাবে কুপোকাত হয়ে থ হয়ে রইলেন। এ ঘটনা শুনে আমার পেছনে বসে মায়ের সঙ্গে আসা বছর দশেকের পিচ্চিও হাসছিল।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রয়াণদিবসে তাঁর জীবন, দর্শন, দেশপ্রেম এবং তাঁর গানের মহিমা নিয়ে এক বিশেষ আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। যেখানে ভৈরবী গীতরঙ্গ দলের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হয় গীতিনকশা ‘সুরের দয়াল রায়’। যে দয়াল রায় নামটাও তাঁর জীবদ্দশাতে মানুষই ভালোবেসে তাঁকে দিয়েছিল।

মিরপুর ১০, ঢাকা