তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে কী করবেন

ত্বকের যত্ন নিয়মিত নিতে হবেছবি: রয়টার্স

শীতের প্রকোপ শেষ না হতেই শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের উষ্ণতা। তারই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন ধরেই ত্বককে মনে হচ্ছে তেলের খনি। ত্বকে কিছুই ব্যবহার করতে পারছেন না, মেকআপগুলো গলে গলে পড়ছে। ওপেন পোর এত বেশি যে ভাবছেন কীভাবে কমানো যায়? সারা বছর ধরে ছিল ব্রণের সমস্যা। শীতকালে একটু ভালো ছিলেন, কিন্তু এ গরমে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা—কোনো কিছু থেকেই মুক্তি নেই। এ ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে যাঁরা আসেন, তাঁদের ত্বককে আমরা বলি অয়েলি স্কিন অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বক।

কেন এই তৈলাক্ত ত্বক
আমাদের ত্বকে অসংখ্য তৈলগ্রন্থি রয়েছে, যেখানে সেবাম তৈরি হয়। যার অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রাখা। একে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বলা হয়। এটি ত্বকের ওয়াটার ইভাপোরেশন বা ওয়াটার লসকে প্রতিরোধ করে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। এ ছাড়া ত্বককে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থেকেও রক্ষা করে। সেবামে যেহেতু লিপিড থাকে, তা অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের বাহক হিসেবেও কাজ করে। এই যে এতগুলো কাজ এই সেবামের, তাহলে কিছুটা সেবাম তো আমাদের ত্বকের জন্য অবশ্যই দরকার। কিন্তু তা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত তৈরি হয়, তখন একে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। তখনই আমরা তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায় ভুগে থাকি।

যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁদের জন্য একটি সুখবর হলো—এই সেবাম ত্বকে বলিরেখা বা বার্ধক্যের লক্ষণগুলো থেকে ত্বককে রক্ষা করে। সুতরাং জানতে হবে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন আমরা কীভাবে নেব। কীভাবে সঠিকভাবে ত্বকের যত্নের মাধ্যমে তৈলাক্ত ত্বকের উপকারী দিকগুলো ধরে রাখব।

তৈলাক্ত ত্বকের কারণ ও লক্ষণ
এটি বংশগতভাবে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ যেহেতু গ্রীষ্মপ্রধান দেশ, আর্দ্রতা বেশি; সে জন্য অধিকাংশ মানুষের ত্বকই তৈলাক্ত। এ ছাড়া আমাদের জীবনযাপনের ধরন, হরমোনের সমস্যা বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণের কারণেও ত্বক তৈলাক্ত হয়ে থাকে।

তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা হিসেবে আমরা বুঝি, ওপেন পোর, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস, ব্রণ ও মুখ অক্সিডাইজড হয়ে যায়। নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য অনেকেই মেকআপ ব্যবহার করে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যায়। ত্বকে কখনোই একটা সতেজ ভাব থাকে না। ত্বককে খুব নিষ্প্রাণ দেখায় এবং তেল চকচকে দেখায়। এ চকচকে ভাবটা আমরা যে হাইলাইট ব্যবহার করি, সৌন্দর্যের জন্য সে রকম নয়। এটি তেল চকচকে ভাব, যা আমরা আশা করি না। এসবই হচ্ছে তৈলাক্ত ত্বকের লক্ষণ।

ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন প্যাক
ছবি: কবির হোসেন

ত্বকের যত্নে আমরা কিছু ভুল করে থাকি, যার জন্য ত্বকে তৈলাক্ত ভাব বেশি দেখা দেয়। আর যাঁদের ত্বক আসলেই তৈলাক্ত, তা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। অনেকেই অবচেতন মনে মুখে প্রচুর হাত দেয়। যখন আমরা মুখ স্পর্শ করি, এটি আমাদের তৈলগ্রন্থিকে উত্ত্যক্ত করে, যার ফলে সেবাম তৈরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক রয়েছে, তাঁরা ত্বকের তৈলাক্ততা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বারবার অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত কোনো ক্লিনজার দিয়ে ত্বককে পরিষ্কার করে। সাধারণত আমরা ডার্মাটোলজিস্টরা ত্বকবান্ধব কোনো অয়েল কন্ট্রোল ক্লিনজার ব্যবহার করতে বলি। কিন্তু তা মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তৈলগ্রন্থিকে উত্ত্যক্ত করে অতিরিক্ত সেবাম তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক হয় আরও তৈলাক্ত।

ময়েশ্চারাইজারের ক্ষেত্রে দুটি ভুল করে থাকে। একটি হচ্ছে, ময়েশ্চারাইজারই ব্যবহার করে না। ত্বক যেহেতু ডিহাইড্রেটেড থাকে, সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশি অয়েল প্রোডাকশন করে। আবার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সাধারণত ওয়াটারবেজড, জেলবেজড বা হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম ব্যবহার করতে হয়। সেটি না করে হয়তো অয়েলবেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে। সে ক্ষেত্রেও ত্বকে অয়েল প্রোডাকশন বেশি হয়ে থাকে।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য নির্দিষ্ট কিছু মেকআপ থাকে; সেবাম রেগুলেটর মেকআপ, সেগুলো ব্যবহার না করে তাঁরা গ্রিজি প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন, যার ফলে ত্বক হয়ে ওঠে তৈলাক্ত। এ ছাড়া জাংক ফুড প্রসেসড ফুড ও হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবারও কিন্তু আমাদের তৈলগ্রন্থিকে উত্ত্যক্ত করে অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ করে।
যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা এটি নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন থাকেন। এ উদ্বিগ্নতা আমাদের স্ট্রেস হরমোনকে বাড়িয়ে দেয়, যা অতিরিক্ত সেবাম তৈরির আরেকটি কারণ। এ ছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরন হরমোনের আধিক্যের ফলে প্রায় ৯৬ শতাংশ কিশোর-কিশোরী তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায় ভোগে।

করণীয়
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ত্বকের যত্নে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ফেস ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, ক্লিনজারটি যেন ক্যামোমাইল এক্সট্র্যাক্ট–যুক্ত হয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ডিপ ক্লিনজিংয়ের ক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করবেন সপ্তাহে দুদিন, যা এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে ত্বকের পোর ক্লগকে প্রতিরোধ করবে। এ ছাড়া নিয়াসিনামাইড, আলফা আরবিউটিন, ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড বা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট–যুক্ত স্লিপিং মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন, যা মাইল্ড এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।

সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যেন এটি সেবাম রেগুলেটর ও ম্যাটিফায়িং হিসেবে কাজ করে; যেমন নিয়াসিনামাইড, জিঙ্ক, রাইস ওয়াটার, সি উইড এক্সট্র্যাক্ট–যুক্ত সানস্ক্রিন। এগুলো একই সঙ্গে প্রাইমার ও সানস্ক্রিনের কাজ করে। আর অবশ্যই একজন ত্বক–বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন, যিনি আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ত্বকের যত্নের প্রোডাক্ট প্রেসক্রাইব করবেন।

মেকআপের ক্ষেত্রে সব সময় লক্ষ রাখবেন, তা যেন অয়েল কন্ট্রোলড, নন কমেডোজেনিক প্রোডাক্ট হয়। এগুলো পণ্যের গায়েই লেখা থাকে। পণ্যের উপাদানগুলো একটু খেয়াল করবেন। কারণ, মেকআপে এখন কিন্তু ডার্মোকসমেসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করি সব কিছুতেই, যা একাধারে ত্বকের যত্ন, রোগপ্রতিরোধ ও সৌন্দর্যবর্ধনে সাহায্য করে। এ প্রোডাক্টগুলো সাধারণত ডার্মাটোলজিস্ট টেস্টেড, ডার্মাটোলজিস্ট অনুমোদিত হয়ে থাকে। সাধারণত ত্বক–বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের প্রোডাক্টগুলো প্রেসক্রাইবড করে থাকেন।

ওয়েলনেস অ্যান্ড বিউটি কনটেস্ট কনসালট্যান্ট এবং স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ