২৯ নভেম্বর, ২০২৪। ঘর থেকে দূরে প্রথম জন্মদিন। সকালে ঘুম ভাঙে এক অচেনা ফোনকলে। ওপাশ থেকে এক মহিলা অকপট বললেন, ‘আপনি তন্ময় না? দ্রুত কুয়েট মেইন গেটের সামনে আসুন।’ কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই কলটি কেটে যায়। কী করা যায় এখন?
শুক্রবার সকালের রোদমিষ্টি ঘুম বিসর্জন দিয়ে ঝিমুনি দিচ্ছি তখন, আবার এল কল। একই মহিলা, ‘আপনি কোথায়, জলদি আসুন।’ এবার জিজ্ঞাসা করি, ‘কে আপনি? আমাকে কীভাবে চেনেন?’ অপরিচিত মহিলাটি বললেন, ‘আসুন একবার, এরপর বলছি।’
হাতমুখ না ধুয়েই বেরিয়ে পড়লাম। মেইন গেটের কাছেই বাসা। গিয়ে কল দিতেই দেখি, এক মধ্যবয়সী মহিলা আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন। কাছে এসেই হাতে ধরিয়ে দিলেন বড় একটা কার্ডবোর্ডের বাক্স। আমি কিছু বলার আগেই তিনি বলা শুরু করলেন, ‘এক সপ্তাহ যাবৎ আপনার মা আমাকে বলে রেখেছেন, যেন আপনার কাছে এসব ঠিকঠাক পৌঁছে দিই। এখন আমি চিন্তামুক্ত হলাম। শুভ জন্মদিন আপনাকে।’ এই বলেই তিনি চলে গেলেন।
মা থাকেন চট্টগ্রামে, কিন্তু পার্সেল এসেছে খুলনায়। যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নতি হয়েছে সত্য, তবে খুলনার এই বিচ্ছিন্ন অংশে এমন কোনো ডেলিভারি সিস্টেমের কথা আমার জানা ছিল না। সেখানে মা জানবেন কী করে! অবাক হয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
বাসায় পৌঁছে বাক্স খুলে আমার চক্ষু তো চড়কগাছ! বাক্সে বড় একটি জন্মদিনের কেক! সঙ্গে রয়েছে বিরিয়ানি, নকশি পিঠাসহ আরও কত কিছু! তত দিনে হলের ও বাইরের খাবার খেয়ে খেয়ে ভালোই অরুচিতে ভুগছিলাম। হুট করে এত সব আয়োজন দেখে চোখ ভিজে এল। সঙ্গে সঙ্গে কল করলাম মাকে। সারপ্রাইজ সফল হয়েছে জেনে মা অত্যন্ত খুশি।
বুঝতে পারলাম, সেদিন সেই বাক্সে শুধু খাবার ছিল না, ছিল আমার জন্য ভালোবাসা, আদর, আর এক অদৃশ্য আলিঙ্গন; যা শত মাইল দূর থেকেও আমার জন্মদিনটাকে অন্য রকম করে তুলেছিল। সেই দিন বুঝেছি, আমার সবচেয়ে বড় উপহার মা নিজেই।
ধন্যবাদ, মা তোমাকে। তুমি আছ বলেই তো দূরেও কাছে লাগে। ভালোবাসি তোমায় প্রতিটি নিশ্বাসে।
শিক্ষার্থী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়