হঠাৎ একদিন শহীদুল স্যার বাসায় এলেন

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

ছোটবেলা থেকেই গম্ভীর স্বভাবের ছিলাম। কারও সঙ্গে সহজে মিশতে পারতাম না! স্কুলে যেতে চাইতাম না। আম্মুর কাছে অনেক কান্নাকাটি করতাম। স্কুলের পরিবেশ, সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষিকা কাউকেই ভালো লাগত না। একসময় স্কুলে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিলাম। এর জন্য আম্মুর অনেক মার খেতে হয়েছে।

এদিকে, সহপাঠীরা সবাই ক্লাস ওয়ান থেকে টুতে ওঠে গেল। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে লাগল। হঠাৎ একদিন শহীদুল স্যার আমাদের বাসায় এলেন। তিনি আমার ক্লাস টিচার ছিলেন। স্কুলে যাচ্ছি না শুনে দেখা করতে এসেছেন। স্যার আমাকে বোঝাচ্ছেন— দেখো মা, মানুষের জীবনটাই এরকম। পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও প্রতিদিন পরিবর্তন হতে হয়। শিক্ষা জিনিসটা আমাদের মেরুদণ্ডের মতো; যা ব্যতীত জীবন অচল। শিক্ষিত না হলে কেউ দাম দেবে না। এই যে দেখো, আমি শিক্ষিত। এ জন্য গ্রামের লোকজন আমাকে কত সম্মান করেন। তোমার বাবা শিক্ষিত। তোমার বাবাকে সবাই ভালো মানুষ হিসেবে জানেন। তুমি শিক্ষিত হলে তোমাকেও সবাই অনেক সম্মান করবে, ভালোবাসবে।

সেই দিন স্যারের কথাগুলো আমার জীবন পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাই। স্কুলেও যাওয়া শুরু করি। কথাগুলো আজও মনে পড়ে। স্যার, পৃথিবীতে নেই আট বছর হয়ে গেছে। তাঁর ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না।