উনুনে পোড়া সম্মান

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মা হঠাৎ করেই বাড়িতে এসেছেন না জানিয়ে। আমাকে দেখে বেশ অবাক হন। বাবার বাড়িতে থাকতে আমি রান্নার কাজ জানতাম না। সব সময় আধুনিক পোশাক পরতে ভালোবাসতাম। সারা দিন ঘুরে বেড়াতাম দস্যি মেয়ের মতো।

রূপম অবশ্য আমাকে এই নিয়ে কখনো কোনো কথা শোনায়নি। বরং বলত, ‘আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় করবে না।’

রূপম আমার স্বামী। আত্মমর্যাদাশীল মানুষ। আমাদের দুই বছর হলো বিয়ে হয়েছে। পারিবারিকভাবেই হয়েছে। ও আমার বাবার থেকে কোনো উপঢৌকন পর্যন্ত নেয়নি। বাবা কিছু দিতে চাইলে বলত, ‘আপনি আপনার ঘরের মূল্যবান সম্পদ আমাকে দিয়েছেন। আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারি।’

সেদিনই বুঝেছিলাম, এমন মানুষকে আজীবন সম্মান করা যায়।
রূপম একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করত। আমাদের দিন ভালোই কাটছিল। রান্না তেমন না পারলেও সমস্যা হয়নি কখনো। রূপম আমাকে সাহায্য করে। তরকারিতে লবণ বেশি হলে অমৃত বলে প্রশংসায় ভাসায়। আমি নিজে মুখে না দেওয়া পর্যন্ত বুঝতেই পারতাম না। এভাবেই যাচ্ছিল দিন। কিন্তু হঠাৎ...

একদিন রূপম গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পঙ্গু হয়ে যায়। চাকরিটা রক্ষা করা আর সম্ভব হয়নি। আমার ওপর পুরো সংসারের দায়িত্ব। একটা চাকরিও খুঁজে নিতে হয়েছে। এখন ঘরে-বাইরে সবটাই আমাকে সামলাতে হয়।

আমি বাবার সাহায্য নিতে পারতাম। কিন্তু নিইনি। এতে রূপমের অসম্মান হবে। নিজেই রান্না করি এখন উনুনে; উনুনের তাপে। কপালে, নাকে, গালে একটু কালি লাগলেও কষ্ট হয় না। একবার হাতে গরম তেল পড়ে পুড়ে যায়। রূপম মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলে, ‘তুমি কেন এত কষ্ট করছ? বাবার বাড়ি গেলেই তো পারো।’ হেসে বললাম, ‘আমার কাছে তোমার অসম্মানের চেয়ে উনুনে পোড়া সম্মান অনেক বেশি সহনীয়।’

নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর