যান্ত্রিক শহর থেকে দূরে গিয়ে নিজেদের সতেজ ও প্রাণবন্ত করতে বেশ কয়েক দিন ধরেই সহকর্মীদের মধ্যে চলছিল নানা আয়োজনের হাঁকডাক। শীতকাল সামনে থাকায় সবাই পালংকিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ব্রিটিশ আমলে সমুদ্র ও জঙ্গলে ঘেরা পালংকিতে আশ্রিত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেয়। ক্যাপ্টেন কক্স পালংকি এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন; যা কক্স সাহেবের বাজার নামে পরিচিতি পায়। আর কক্সবাজারের প্রাচীন নাম হলো পালংকি। একসময় এটি ‘প্যানোয়া’ নামেও পরিচিত ছিল; যার অর্থ হলুদ ফুল। অতীতে কক্সবাজারের আশপাশের এলাকা ছিল হলুদ ফুলের সমারোহে ভরপুর। সেখান থেকেই ‘কক্সবাজার’ নামের উৎপত্তি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শাণিত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, মেঘকালো সারি সারি ঝাউবন, সৈকতের বুকে আছয়ে পড়া ছোট–বড় একেকটি ঢেউ, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য, ভোরের আকাশে পাহাড়ের পেছন থেকে সূর্য মামার উঁকিঝুঁকি। আবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মায়াবী রূপ—এই সব সৌন্দর্যের আয়োজন নিয়েই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচিত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। এই অপূরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হুট করেই এক পশলা বৃষ্টি চলে আসে।
কক্সবাজারের উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে বান্দরবান, পার্বত্য জেলা ও মিয়ানমার; পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। দ্বীপ রয়েছে পাঁচটি। এগুলো হলো মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন। কক্সবাজারে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান।
রেজু খালে কায়াকিং: কক্সবাজারের পাশেই রেজু খালে কায়াকিংয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই সাগরপাড়ে ঘুরতে গিয়ে যদি ভিন্ন ধরনের কিছু করতে ইচ্ছা করে, তবে রেজু খালে করতে পারেন কায়াকিং। একা কিংবা বন্ধুদের নিয়ে শান্ত সেই পরিবেশে কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা কক্সবাজার ভ্রমণে আপনার মনে আলাদা জায়গা করে নিতে বাধ্য!
খোনকারপাড়, টেকনাফ: একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে সমুদ্র—এর মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি; সব মিলিয়ে দুর্দান্ত পরিবেশ। টেকনাফ সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলবে সারিবদ্ধভাবে জেলেদের মাছ ধরার বর্ণিল সব ইঞ্জিনচালিত নৌকা। লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে জেলেরা তাঁদের নৌকাগুলোকে সাজিয়ে রাখেন। নৌকার গায়েও থাকে রংতুলির শৈল্পিক আঁচড়। আহা! লোভ সামলাতে না পেরে সহকর্মীদের নিয়ে রঙিন নৌকার সামনে ফ্রেমে বন্দী হলাম। সমুদ্রের উদারতা উপলব্ধি করলাম।
টেকনাফেই দুপুরের খাবার: টেকনাফ থেকে ফেরার পথে পথের ধারের একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। মজার বিষয় হলো রেস্টুরেন্টটির সাজসজ্জা ছিল নানা রঙের বোতল দিয়ে। সবাই এতই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে সাজসজ্জা উপভোগের আগে খাবারের মেন্যু কার্ডে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এরপর আমাদের জন্য তাজা কোরাল মাছ জেলেদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে এল রেস্টুরেন্ট থেকে। কোরাল মাছ ভুনা এবং বিভিন্ন রকম ভর্তাভাজি দিয়ে খাবার খাওয়া।
পাটুয়ারটেক: টেকনাফ থেকে ফিরতি পথে সন্ধ্যা নেমে এল। হুট করে খেয়াল করলাম, আমরা চলে এসেছি পাটুয়ারটেক সমুদ্রসৈকতে। সৈকতে পরিবার-পরিজন, প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস। কিছুটা সময় কাটালাম সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে। এতটা পথ জার্নি করে সবাই অবশ্য ক্লান্তও ছিলাম। অবসাদ দূর করতে কেউ কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিল।
রাত হচ্ছে। চিরায়ত নিয়ম বাড়ি ফেরার তাড়া। অবশ্য ঘুরতে এসে তো আর নিজ বাড়ি থাকা যায় না। তাই ছিল হোটেলে ফেরার তাড়া। আবারও ছাদ খোলা গাড়িতে চড়ে বসলাম। গানের সুরে সুরে ফিরে এলাম হোটেলে। অনেক দিন পর এমন আনন্দময় যাত্রা।
গণমাধ্যমকর্মী