যদি বন্ধু হও, তবে হাত বাড়াও

পরচর্চা করলে অন্যরাও বন্ধু ভাবে না। মডেল: বাপ্পী, সারাকা, সজীব, রবি ও মৌসুমী। ছবি: সুমন ইউসুফ

যদি বন্ধু হও যদি বাড়াও হাত
জেনো থামবে ঝড় মুছে যাবে এই রাত
হাসিমুখ তুলে অভিমান ভুলে
রাঙা সূর্য বলবেই সুপ্রভাত।
শুভমিতার কণ্ঠে আমরা এই গান শুনেছি। বন্ধু হলে তো হাত বাড়াতেই হবে। তাতে বন্ধুর জীবনে ঘটবে রাতের অবসান। ঘুচবে আঁধার। আসবে অভিমান-ভোলা রাঙা প্রভাত।
বন্ধু কে? ‘হিতোপদেশে’ আছে:
‘উৎসব, ব্যসন আর দুর্ভিক্ষসময়, শ্মশান, রাজার দ্বার আর শক্রভয়; এসবে সহায় যার যেইজন হয়, সে তার যথার্থ বন্ধু জানিবে নিশ্চয়।’

ব্যসন কথাটা এখানে বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। মৃগয়া, জুয়া—এ–জাতীয় ১০টা কামজ ব্যসন আছে; আর দৌরাত্ম্য, ক্ষতি, প্রতারণা, ঈর্ষা—এই ধরনের ৮টা কোপজ ব্যসন আছে। মানুষ আসলে অপকর্ম করার সময় বন্ধুদের সঙ্গে নেয়, বা বন্ধুদের সঙ্গে পড়ে অপকর্ম করে থাকে। এটা শাস্ত্রের কথা।
আমরা বলি, যে আপনাকে মাদক নিতে বলে, সে বন্ধু নয়। তার মানে কুসঙ্গকে আমরা বন্ধুত্ব বলব না।
বন্ধুত্ব হতে হবে ভালো কাজের জন্য।
তবে এ কথা ঠিক যে আমরা বন্ধুর কাছেই নিজের মনকে তুলে ধরি। একজন শিক্ষার্থী তার মনের ভেতরের সংকট—অপমান, ব্যথা, লজ্জার কথা—মা–বাবাকে বলতে চায় না, শিক্ষককে বলতে চায় না, বলে কেবল বন্ধুকে।
কাজেই বন্ধুর মনের কথা কেবল বন্ধু জানে।
তাহলে আমাদের একটা কর্তব্য হলো, বন্ধুর মনের কথা শোনা। আর বন্ধুর মনে কোনো সমস্যা হলে তার পাশে দাঁড়ানো। যদি বন্ধু হও, তবে হাত বাড়াও।

তবে আমরা সবাই মনের বিশেষজ্ঞ নই। পেশাদার মনের বিশেষজ্ঞ আছেন। মনোচিকিৎসক আছেন, মনোবিদ আছেন, কাউন্সেলর আছেন। বন্ধুর মনের সমস্যায় আমরা তাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে পারি। কোনো কোনো হটলাইন সেবা আছে, ফোন করে মনের সমস্যায় পরামর্শ নেওয়া যায়। সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারি।
বন্ধু মানেই মনের বন্ধু। বন্ধুই বুঝতে পারে বন্ধুর মন। বন্ধুর চেয়ে ভালো কোনো মনোবন্ধু নেই।
কাজেই যদি বন্ধু হই, তাহলে হাত বাড়াতে হবে। ‘ওর সমস্যা ও-ই সমাধান করুক’ বলে যেন আমরা বন্ধুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিই।