উত্তরের শেষ সীমানায় একদিন

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে ফ্রেমবন্দী শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণ যেমন মানুষকে আনন্দ দেয় তেমনি নতুন জায়গা পরিদর্শনে নতুন কিছু শেখায়। সমৃদ্ধ করে অভিজ্ঞতার ভান্ডার। কয়েক দিন আগেই আমাদের সম্মান শেষ বর্ষের টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়। এরপরই বন্ধুরা সবাই ঘুরতে যাওয়ার বায়না ধরে। তবে কাছাকাছি কোথাও। সবার মতামতের ভিত্তিতে স্থান নির্ধারণ হয় উত্তরের শেষ সীমানা পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায়। শিক্ষকদের বলতে তাঁরাও রাজি হয়ে যান। উদ্যোগটি সফল করতে শুরু হয় সবার তোড়জোড়।

৯ ডিসেম্বর ভোরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে ঢুকতেই দেখি তিনটি বাস আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত মন, কত দিনের পরিকল্পনা শেষে আমাদের ইচ্ছা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। আনন্দ-উত্তেজনায় আগের রাতে তো ঘুমই আসছিল না। সেই ২০২০ সালে করোনা মহামারির ছুটির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা, সব মিলিয়ে একটা সুদীর্ঘ সময় পর কলেজ থেকে আনন্দভ্রমণ!

নাশতা ও টি-শার্ট বিতরণ শেষে সকাল সাড়ে ৭টায় আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন বন্ধু হকারের স্টাইলে লটারির টিকিট বিক্রির কাজে লেগে যায়। অনেকেই লটারি কেনেন। এর পরপরই বাসের পেছনে বসে গিটারে সুর তোলে গানের শিল্পী বন্ধুরা। সেই সুরে কণ্ঠ মেলায় বাকিরা।

দুপুর ১২টা নাগাদ আমরা তেঁতুলিয়ায় ‘বিসমিল্লাহ্ টি ফ্যাক্টরি’র সামনে পৌঁছাই। এর আগে পঞ্চগড় পার হয়ে তেঁতুলিয়ায় ঢুকতেই রাস্তার পাশে সারি সারি চা–বাগান সবার মধ্যে মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। টি ফ্যাক্টরির ভেতরে ঢুকতেই গাড়ি করে নিয়ে এসে স্তূপ করে রাখা চা-পাতা দেখতে পাই। কীভাবে বাগান থেকে তুলে আনা সতেজ পাতা প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করা হয়, এসব স্বচক্ষে দেখি। অনেকেই আবার সেখান থেকে তাজা চা-পাতা কিনে নেন। অন্যদিকে বন্ধুদের চা–বাগানে ঘোরাফেরা আর ছবি তোলা চলতে থাকে। শুক্রবার হওয়ায় এর মধ্যেই কেউ কেউ জুমার নামাজ আদায় করে নেয়।

মধ্যাহ্নভোজনের সময় হলে সবাই মিলে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো চত্বরে যাই। সেখানে ভোজন শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বন্ধুরা যে যার মতো ঘুরতে বের হয়। আমরা কয়েকজন একটা ভ্যান ভাড়া করে মহানন্দা নদীর তীর বেয়ে চলতে থাকি। পথিমধ্যে চোখে পড়ে রাবার বন, হলুদ বাঁশ ও বড় বাঁশ। মহানন্দার তীর থেকে শিলিগুড়ি ব্রিজ চোখে পড়ে। আরও কিছু দূর গিয়ে কাঁচা পাতার চায়ের স্বাদ নিই। ডাকবাংলো ফেরার পথে একটা শতবর্ষী মন্দিরও চোখে পড়ে।

আবারও বাসে করে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টের দিকে যাত্রা। জিরো পয়েন্টে এসে একটা মিনি স্টেডিয়ামে শিক্ষকদের পরিচালনায় কুইজ প্রতিযোগিতা এবং লটারির র‌্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই বিজয়ীদের পুরস্কার এবং বিকেলের নাশতা বিতরণ করা হয়। এ সময় নজর কাড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা নামানোর দৃশ্য।

সন্ধ্যায় আমরা আবারও কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওনা হই। সবাই মিলে নাচে-গানে ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। রাত ৯টায় শুরু হয় ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ম্যাচ। নাচ-গান বন্ধ হয়ে এবার সবার মনোযোগ মুঠোফোনে খেলা দেখায়। রাত সাড়ে ১০টায় আমরা কুড়িগ্রামে পৌঁছে যাই।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা