পুনর্জন্মের প্রতীক্ষায়

অলংকরণ: আরাফাত করিম

আগস্ট মাস। দিল্লির রাজপথ বিদ্রোহী জনতার স্লোগানে মুখরিত। হাতির ওপর বসে আছেন দারা এবং পুত্র সিপির। গায়ে আটপৌরে কাশ্মীরি চাদর। মাথায় নোংরা পাগড়ি। হাতির পায়ের ছাপ ধরে হাঁটছেন বেইমান মালিক জিওন। মুখে অট্টহাসি।

দিল্লির আমজনতার প্রিয় পাত্র দারাকে দেখে যেন অশ্রুর বাঁধ ভেঙেছে। বুকের ভেতর জমে থাকা পুরোনো হাহাকার আজ জেগে উঠেছে। কিন্তু কে শুনবে এই আর্তনাদ? আওরঙ্গজেব যে সহোদর ভাইয়ের রক্ত দিয়ে সরাব পান করতে চান!

খাওয়াসপুরা ভবনে নিয়ে আসা হলো দারা এবং পুত্র সিপিরকে। তখনো বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে দিল্লিজুড়ে। হঠাৎ ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ের কপালের সিঁদুর মুছে যাওয়ার মতো। সময় ঘনিয়ে আসছে। হয়তো এখনই দরজায় কড়া নাড়বে যমদূত।

অপর দিকে মধ্যরাতে গোপনে বৈঠক বসেছে। সেখানে উপস্থিত স্বয়ং তাঁর মামা শায়েস্তা খাঁ এবং বোন রোশনারা ও অন্যরা। উদ্দেশ্য, কীভাবে দারা এবং পুত্র সিপিরের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে কুকুরকে খাওয়ানো যায়।

ডাক পড়ল ঘাতক নজর কুলির। সে খাওয়াসপুরা ভবনে প্রবেশ করল নীরবে। অপরাধ হিসেবে পড়ে শোনাল, হিন্দুদের মন্দির নির্মাণ করে দেওয়া, গীতা অনুবাদ প্রভৃতি। অতঃপর, পিতা দারার কাছ থেকে সিপিরকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল অপর একটি কক্ষে। সুদর্শন পুত্রের কান্নার আহাজারি যেন পিতা দারার হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে ঢুকে যাচ্ছে। অবশেষে পিতা-পুত্রের মস্তক আলাদা করে সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে পাঠানো হলো। তিনি আদেশ দিলেন, যেন মস্তকদ্বয় ধৌত করে কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর কারাগারে পাঠানো হলো দারা এবং পুত্র সিপিরের মস্তক। সেখানে বন্দী ছিলেন সম্রাট শাজাহান এবং বোন জাহানারা। প্রিয় জ্যেষ্ঠ পুত্রের এমন করুণ পরিণতি দেখে বৃদ্ধ বাবা ঢলে পড়লেন কন্যার কোলে।
কয়েক শতাব্দী কেটে গেল। আজও দিল্লির খাওয়াসপুরা ভবন দারার পুনর্জন্মের প্রতীক্ষায়।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়