আম্মুর ফোন

গত রোববার ছিল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মায়ের সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি ও ভালো লাগার ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য লেখা পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। বাছাইকৃত লেখা নিয়ে আজকের আয়োজন।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি। আম্মু থাকেন অজপাড়াগাঁয়ে। তাঁর জীবনের একটাই স্বপ্ন, তাঁর ছেলে ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্নই পূরণ হতে চলেছে।

একদিনের ঘটনা। রাত তখন সাড়ে ১০টা। আম্মুর ফোন। কলটা দেখে একটু ইতস্তত বোধ করলাম। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কল ধরি…
- কেমন আছিস বাবা? কী করিস? রাতের খাবার খেয়েছিস? ঘুমাবি কখন? কাল পরীক্ষা আছে?
- উফ! আম্মু এত প্রশ্ন একসঙ্গে করলে কোনটার উত্তর দিব! (রাগান্বিত হয়ে ফোন রেখে দিই)

পরদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে যাচ্ছিলাম, আবারও আম্মুর ফোন। কিন্তু ধরতে ইচ্ছা করছিল না। ওদিকে ফোনের রিংটোন বেজেই যাচ্ছে। বন্ধুরা বলছে, কিরে কে ফোন দেয়, ধরিস না যে! আমি বলি, ‘আম্মুর। এত ফোন দেওয়া লাগে বল! মেজাজটাই গরম লাগে।’

মায়ের সঙ্গে লেখক
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

এই বলে বন্ধুদের দিকে তাকাতেই দেখি এক বন্ধুর চোখে পানি। ওর যে মা নেই, কথাটা মনে ছিল না। আচ্ছা, বন্ধুটি তখন কী ভাবছিল? হয়তো ভাবছিল, মা থাকতে মায়ের কদর করিস না; যেদিন থাকবে না, সেদিন বুঝবি!

মুহূর্তেই আমার মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করল। অপরাধবোধও হলো। নিজেই নিজেকে বললাম, মায়ের কিছু হয়ে গেলে স্বপ্নের কী হবে? আমার জীবন কী আগের মতো থাকবে? তিনি আছেন বলেই তো আজ মেডিকেলে পড়াশোনা করতে পারছি।

পরক্ষণেই মাকে ফোন দিলাম। অপর প্রান্ত থেকে হ্যালো বলতেই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। মা বুঝে ফেলেন তাঁর ছেলে কাঁদছে। জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হয়েছে বাবা তোর! কেউ কি কিছু বলেছে? বলবি তো আম্মুকে, কী লাগবে তোর, বল, আমি দিচ্ছি!’
আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হলো না। কেবল বললাম, ‘সরি আম্মু, আমাকে মাফ করে দিয়ো।’

এর পর থেকে আর কখনোই আম্মুর ফোন ধরতে দেরি হয়নি। আম্মুর ফোন না পেলে আমি নিজেই কল দিয়ে খোঁজখবর নিই।

সভাপতি, জামালপুর বন্ধুসভা