ভ্রমণের জন্য সঠিক সময় কখন

ভ্রমণের সেরা সময় এখনই। ছবিটি রাঙামাটির বিলাইছড়িতে তোলাছবি: অনিক সরকার

জীবনে হতাশা আসাটা স্বাভাবিক। সবার জীবনেই কোনো না কোনো সময় আসে। কর্মস্থল, ব্যবসা, অর্থ, সম্পর্ক, ভালোবাসা, পারিবারিকসহ নানা কারণ থাকতে পারে। এসব থেকে মুক্তি পেতে আমরা ব্যায়াম, ঘুমানো, ডায়েট, ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যসহ বিভিন্ন কিছু করে থাকি। মাঝেমধ্যে এগুলো থেকেও দূরে থাকতে ইচ্ছে করে। আবহাওয়া বদল জরুরি হয়ে পড়ে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে ভ্রমণ। সবকিছু থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে চলে যান।

ভ্রমণের সঠিক সময়
আমাদের চারপাশে এমন খুব কম মানুষই আছেন, যাঁদের ভ্রমণ পছন্দ নয়। যে কারও ফেসবুক প্রোফাইলে একটু ঢুঁ মেরে দেখুন। দেখবেন অধিকাংশের বায়োতে শখের কাজের জায়গায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ভ্রমণও লেখা আছে। এমন কিছুসংখ্যক মানুষের প্রোফাইলেও এটা লেখা দেখবেন, যিনি হয়তো বিগত এক-দুই বছরে কোথায় ঘুরতে যাননি। তার মানে এই নয় যে তিনি মিথ্যা লিখেছেন। হয়তো ঘুরতে যাওয়ার জন্য সময় বের করতে পারেননি অথবা নিজের সময় হলেও সঙ্গীর অভাবে যাওয়া হয়নি। কিংবা যখন সময় হয়েছে, তখন হাতে অর্থ ছিল না। অসংখ্য কারণ থাকতে পারে।
আবার কেউ কেউ বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ভ্রমণে বের হন। কারও কাছে গ্রীষ্মকাল পছন্দ, কারও শীতকাল। কেউ বর্ষায় চলে যান পাহাড়ে। আসলে ভ্রমণের জন্য সঠিক সময় কখন?

সিলেটের রাতারগুল
ছবি: অনিক সরকার
নিজের স্বপ্নকে কখনো ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখতে নেই। ভবিষ্যৎ না–ও আসতে পারে। আগামীকাল জীবনে কী হবে, আমরা জানি না। তাই এখনই ভ্রমণের সেরা সময়।

একটা সময় ছিল, যখন ডিসেম্বরে শীতকালীন ছুটিতে ভ্রমণে বের হতেন মানুষ। পরিবার নিয়ে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। এখন সময় পাল্টেছে। ভ্রমণের জন্য আলাদাভাবে নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম নেই। যাঁদের ভ্রমণ পছন্দ, সারা বছরই কোথাও না কোথাও ঘুরতে চলে যান। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অথবা সরকারি ছুটিতে। কেউ কেউ কাজ থেকে আলাদাভাবে ছুটি নিয়ে নেন।

ভ্রমণ কেন জরুরি
ভ্রমণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বাইরের কিছু সময়। ছোটবেলায় ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের অনুভূতির কথা মনে আছে? মনে হতো, জীবনের সেরা সময় এটি। অন্তত একটি মাস পড়াশোনার জন্য কেউ আর তাড়া দেবে না, স্কুলে যেতে হবে না, পুরোনো বই ধরতে হবে না, খুব ভোরে শীতের মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে হবে না। নানাবাড়ি, দাদাবাড়ি, আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যাবে। আহা কী আনন্দ! নিজেকে মনে হতো খাঁচা থেকে সদ্য মুক্ত হওয়া পাখি। যাকে ধরার সাধ্য কারও নেই। ভ্রমণ আমাদের সেই অনুভূতি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দেয়।

এটা কেবল দায়িত্ব থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়, বরং ভ্রমণ আমাদের নতুনভাবে খুঁজে পেতে সহায়তা করে। মানসিক ও শারীরিক শান্তি এনে দেয়। যখন আপনি কোথায় যান, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে মেশা, তাঁদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া, সেই সংস্কৃতির খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা। এসব ব্যক্তি মানুষকে আরও পরিপূর্ণ করে তোলে। নিজেকে মনে হবে দুনিয়ার সবচেয়ে স্বাধীন ব্যক্তি। সর্বোপুরি ভ্রমণ ব্যক্তিগত উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে।

বর্ষায় ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম প্রিয় জায়গা টাঙ্গুয়ার হাওর
ছবি: অনিক সরকার

ভ্রমণ করতে কি বেশি অর্থের প্রয়োজন
একদমই না। আপনার কাছে যতটুকু অর্থ আছে, সেটা নিয়েই কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন। আজকাল ফেসবুককেন্দ্রিক বিভিন্ন ভ্রমণ গ্রুপ আছে। তারা স্বল্প খরচে এক বা দুই দিনের ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে। দেশের ভেতর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, সিলেটের রাতারগুল, সাদাপাথর, বরিশালের পেয়ারাবাগান, কুয়াকাটাসহ আরও কিছু জায়গা রয়েছে; যেখানে আপনি দুই থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কোথায় থাকবেন, পরিবহন ও খাবারের খরচ নিয়ে অবশ্যই আগেই একটা পরিকল্পনা করে নিতে হবে।

আবার একা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গেও চলে যেতে পারেন। দূরে কোথাও গেলে কিংবা সময় বেশি দিন নিলে খরচ আরও বেশি হবে। সবচেয়ে জরুরি বিষয়, আপনার ইচ্ছাশক্তি। হঠাৎ পরিকল্পনা করুন, বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ুন; দেখবেন অর্থ কোনো সমস্যা নয়।

নিজের স্বপ্নকে কখনো ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখতে নেই। ভবিষ্যৎ না–ও আসতে পারে। আগামীকাল জীবনে কী হবে, আমরা জানি না। তাই এখনই ভ্রমণের সেরা সময়। বেরিয়ে পড়ুন আর নিজেকে খুঁজুন।