বগুড়া—সাধ্যের মধ্যে সুখ-শান্তির সব উপাদান রয়েছে যেখানে

সংস্কৃতিচর্চার জন্যও বগুড়ার খ্যাতি রয়েছেছবি: সোয়েল রানা

অন্য জেলাগুলো থেকে যাঁরা বগুড়ায় চাকরি করতে যান এবং চাকরিসূত্রে দীর্ঘদিন সেখানে থাকেন, তাঁদের একটা বড় জনগোষ্ঠীই বগুড়ায় স্থায়ী হয়ে যান। এ ছাড়াও বগুড়ায় যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা বেশ আরামেই থাকেন। কারণ, সেখানে সস্তায় ভাত-তরকারি পাওয়া যায়। আছে আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থাও।

শহরের নেসকোর গলিতে ৮০ টাকা হলে খাসির গোশতের বিরিয়ানি পাওয়া যায়। পাশেই ৪০-৫০ টাকা হলে ডিম, ভর্তা, ভাজি দিয়ে পেটপুরে খেতে পারবেন। টেম্পল রোডে ৩০ টাকা দিয়ে ২টা গমের রুটি খেয়ে দিন পার করে দিতে পারবেন। এর বাইরেও বিভিন্ন হোটেলে ১০০ টাকার মধ্যেই খুব ভালোভাবে খেতে পারবেন। এমন গরমের দিনে সাতমাথায় ১০ টাকাতেই ট্যাং, চিনি, বিটলবণ মিশ্রিত পানি খাওয়া যায়। ফতেহ আলী রাস্তার পাশে বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন পানি ২০ টাকাতেই পাওয়া যায়।

এ তো গেল খাওয়ার ফিরিস্তি। থাকার ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেক সুবিধা। একা মানুষ হলে জহুরুল নগর, পুরান বগুড়া, সেউজগাড়ী, সবুজবাগে মেসে থাকলে ১০০০-১৫০০ টাকায় ভালোমতো থাকতে পারবেন। বিবাহিত হলে রহমান নগর, কানছগাড়ি, কলোনি—এসব এলাকায় কম খরচে সাবলেট নিয়ে চার-পাঁচ হাজার টাকার মধ্যেই থাকা যায়। বগুড়ায় সুপেয় পানিরও অভাব নেই।

এবার আসি বাজার-সদাইয়ের খরচে। শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার কিংবা কলোনি এলাকায় কম খরচেই ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারবেন। কেউ যদি টাটকা সবজি চান, সে ক্ষেত্রে সুলতানগঞ্জ, বনানী বাজারে তরতাজা শাক-সবজি কৃষকের হাত থেকেই নিতে পারবেন। শহরের অদূরে মহাস্থানগড় বাজারে আরও বেশি সুবিধা পাবেন।

পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার ক্ষেত্রেও রয়েছে দারুণ সুবিধা। শহরে উচ্চ-নিম্ন দুই ধরনের মার্কেট রয়েছে। শোরুম ব্যতীত আলতাফ আলী, আলামিন কমপ্লেক্স—এসবে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই পোশাক পাওয়া যায়। হকার্স মার্কেট থেকে খুব স্বল্প দামে পোশাক কেনার সুবিধা তো আছেই।

বগুড়ায় রয়েছে সরকারি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। এসবে রোগীরা সরকারিভাবে কম খরচে ভালো চিকিৎসা পান। বগুড়ায় আছেন ডা. সামির হোসেন মিশু; যিনি প্রতি রাতে সাতমাথায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। আছেন ডা. পল্লব সেন; যিনি শুক্রবারে ফ্রিতে চক্ষু চিকিৎসা করান। পাশাপাশি বগুড়ায় চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০০ টাকা ফি দিয়ে গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতাল, গাক চক্ষু হাসপাতাল থেকে পরমার্শ নিতে পারেন। বগুড়ায় মাঝেমধ্যেই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়। যেখানে রোগীরা ফ্রিতে সেবা নিতে পারেন।

বগুড়ায় রয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা, লেখক চক্র, খেলাঘর, বগুড়া থিয়েটার, রক্তদান সংগঠনসহ বেশকিছু ভালো সংগঠন। এসব সংগঠনে যুক্ত হলে আপনি জ্ঞানীগুণী মানুষদের সঙ্গে মিশতে পারবেন, আড্ডা দিতে পারবেন। আপনার জ্ঞানের পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনি একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও সাহায্য করবে।
এবার আসি যাতায়াত খরচে। বগুড়ায় এখনো রিকশায় ১০ টাকা ভাড়া আছে। মোটামুটি আধা-এক কিলো রাস্তা ১০ টাকাতেই যাওয়া যায়। রয়েছে সিএনজির ব্যবস্থা। ৬-৭ কিলোমিটার রাস্তায় ২০ টাকা ভাড়া দিয়েই চলাচল করা যায়। একটু দূরের রাস্তার জন্য রয়েছে বাসের ব্যবস্থাও।

শরীরে বিশুদ্ধ হাওয়া লাগাতে ইচ্ছে হলে পৌরপার্ক, খোকনপার্ক, মমইন ইকোপার্কে গিয়ে গা এলিয়ে বসে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রিয় মানুষের সঙ্গে স্বল্প দামে খাবারদাবারের জন্য সাতমাথায় নানা পদের বার্গার, রোল, পিঁয়াজি, বেগুনি, বটভাজি, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়িসহ নানারকম বাহারি খাবারের পসরা সাজানো থাকে।

ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হলে মহাস্থানগড়, খেরুয়া মসজিদ, ভাসু বিহার, শান্তাহার জংশন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, মমইন, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, ওয়ান্ডারল্যান্ড, কচুয়াদহ, বিউটি পার্ক, ডানা পার্ক, বেতগাড়ী দ্বিতীয় বাইপাসসহ নানা জায়গা রয়েছে।
বগুড়া যেন একটা প্যাকেজ। যাঁরা দূর থেকে গিয়ে থাকেন, তাঁরা সাধ্যের মধ্যে সুখ-শান্তি খুঁজে পান।

বন্ধু, বগুড়া বন্ধুসভা