একফালি হলুদ রোদ

অলংকরণ: তুলি

প্রিয় তানু,

জানো, কত শীতের সকাল কেটেছে তোমার অপেক্ষায়।
কতবার ভিজেছে মন ঘন কুয়াশায়।

আমার হৃদয় হৃৎপিণ্ডের চেয়েও অনেক গভীরে, রক্ত আর শিরা-উপশিরারও অনেক গহিনে যে অস্পৃশ্য অবিনশ্বর রুহ আছে; সেই রুহবিন্দু থেকে তোমাকে ভালোবাসি। তোমার রূপ অবয়ব বা বয়স নয়, তোমার আত্মাকে ভালোবাসি। ভালোবাসা মানে নিজের অপর সত্তাকে তোমার মধ্যে খুঁজে পাওয়া। যাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ। আমার হৃৎপিণ্ডের একটু ওপরে, অল্প ডান পাশে; আমি নতুন হৃৎস্পন্দন টের পাই। তোমার জন্য এই হৃৎস্পন্দনের জন্ম। তুমিই আমার সেই হৃদয়ের টুকরা, যা দিয়ে আমাকে তৈরি করা হয়েছে; আর যাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমি অপূর্ণ।

তোমার কাছে কিছু চাওয়ার সাহস নেই আমার। আমি বরং তোমার কাছে নিজেকে দিয়ে দিলাম। আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ-সম্পত্তি দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবকিছুর ওপর কর্তৃত্ব থাকল শুধু তোমার। তুমি আমার প্রসারিত বাহুডোরে না আসো, যদি আমাতে তুমি নিজেকে দিতে না চাও, তবু আমার সবকিছু তোমার। জানি না মানুষ কেন বলে প্রেমে অনেক কষ্ট। পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। তারা হয়তো জানে না ভালোবাসা কী। তাদের হয়তো সে ধৈর্য ছিল না সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে পাওয়ার।

নিজের জোর করে তৈরি করা ভালোবাসায় আবদ্ধ তারা। তা না হলে তারা জানত, সত্যিকারের ভালোবাসায় চাওয়ার কিছু থাকে না। প্রশ্ন থাকে না, হৃৎস্পন্দন থেমে যায় না, বুক মোচড় দেয় না। কষ্ট হয় না। তাড়নার জঞ্জাল ভ্রু কুঁচকে ঝামেলা থেকে মুক্তি চায় না। ভালোবাসা মানে নিজের কাছে হার মানা নয়। নয় শুধু পছন্দ হয়েছে একজনকে, তাই তাকে বশে আনা। ভালোবাসা মানে একা থাকা। ভালোবাসা মানে অপেক্ষা করা। একদিন আয়নার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া। যাকে পেলে এমনিতেই মনের সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যায়। প্রথম স্বপ্নের কথা মনে পড়ে। একঝলক স্বপ্ন।

মনের মধ্যে বয়ে চলা সব ভার একপলকে আকাশে উড়ে যায়। নিজের মন সত্তার প্রতিরূপ খুঁজে পেয়ে বিকশিত হয় হাসি। এই তো সে, যাকে পেতে নয়, নিজেকে দিয়ে দিতে এত বছর ধরে একা হাঁটছি। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমিও তোমায় সারা আকাশ ভেঙে ভালোবাসা দেব। তোমায় ভালোবাসব চোখে চোখ রেখে। ভালোবাসব আঙুলের স্পর্শে। সব দুর্নিবার দূরত্বের কষ্ট উড়িয়ে দেব বুকে চেপে ধরে। তোমার অস্থিরতা শান্ত করব। তোমার সব অতৃপ্তি ভালোবাসার আগুনে পুড়িয়ে দেব।

তোমার অভিমানের জল ঠোঁটে ছুঁয়ে মুছে দেব। তোমায় ভালোবাসব সংগীতের মূর্ছনায়। ভালোবাসব তোমার সুগন্ধি। তোমার প্রতিটি মুহূর্ত কাটবে প্রথম মুহূর্তের পুনরাবির্ভাবের পুলকে। আমি বুঝে নেব তোমার সব সূক্ষ্মতা। চিনে নেব তোমার সব চাতুর্য। বাস্তব করব তোমার সব কল্পনা। তোমার সব চিন্তাভাবনা, ইচ্ছা ও কাজের স্বীকৃতি দেব। তোমার গোপন-প্রকাশ্য সব রুচিতে পাশে থাকব। তোমায় ঘেরা প্রকৃতির সব অসমতায়, দুঃসংবাদে, সুসংবাদে, শোকে, মৃত্যুতে, রোগে, ব্যর্থতায়, বিচ্ছিন্নতায় ছায়ার মতো থাকব, তোমাকে সঙ্গ দেব সর্বদা।

তুমি আমার। কারণ, তুমি যদি আমার সে না হও, তবে কেন তোমাকে পেয়ে এত ভালো লাগে। তবে কেন আমাদের হৃৎস্পন্দন একসঙ্গে স্পন্দিত হয়। তুমি যদি আমার সে না হও, তবে কেন তোমার জন্য পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে একা দাঁড়াতে দ্বিধা নেই আমার। আমি যদি তোমার জন্য না হই, তবে হৃদয় কেন বলে হ্যাঁ, আমি তোমার জন্য। আমার মস্তিষ্কে কেন শুধু তুমি। কেন আমার স্বপ্নে শুধু তুমি। অদেখা ভবিষ্যৎ শুধু তুমি। আমার হৃদয় কেন অবিচল সব সময় তোমার জন্য।

কখনো একসঙ্গে হাসিনি, একসঙ্গে কাঁদিনি, একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজিনি। তবু কেন জানি মনে হয়, শত প্রহর একসঙ্গে হেঁটেছি আমরা, দুজনের দুঃখে কত রাত কেঁদেছি আমরা; বৃষ্টি হয়ে হাজারবার ছুঁয়ে দিয়েছি তোমায়। তোমার আমার এমন কল্পনার মুহূর্তগুলো বাস্তবতায় মিশে যাক, অনন্ত প্রহর তুমি আমারই হয়ে থেকো। তোমায় ভালোবাসি। কোনো কিছু ছাড়াই ভালোবাসি।
দিগন্তবিস্তৃত নীল সমুদ্রের কাছে যেতে চাই,
তোমার হাত ধরে।
পাড়ি দিতে চাই সমুদ্র, তোমার হাত ধরে
আকাশের মোহনীয় নীলের পানে চেয়ে থাকতে চাই,
তোমার হাত ধরে।
আমার মন ছুটে বেড়ায় সেখানে,
যেখানে তোমার পদচারণ।

যদি কোনো একটা রাত কেবল তোমায় ঘিরে হতো; জ্যোৎস্না ভরা রাতে, মায়াবী চাঁদের আলোয়, জোনাকির আলোয়, ঝিঁঝিপোকা ডাকে, ডাহুকি পাখির কলবরে তোমার কোলে মাথা রেখে সারাটা রাত কাটিয়ে দিতাম। ছাদের কার্নিশে বসে খোলা হাওয়ায় মেলে দিতে তোমার কালো কেশ, তোমার শাড়ির আঁচল, কথায় কথায় বলতে
হয়তো,
কি জানি
জানি না।
যদি এমন একটা মুহূর্ত আসত। যদি তোমাকে পেতাম, শুধু তোমাকে। শুভ জন্মদিন মায়াবতী।

ইতি
তাসফীর