যেদিন টিকিট কাটি, সেদিন টিটি আমাকে ধরে না। সময়ের অভাবে যদি টিকিট কাটতে কোনোভাবে ভুলে যাই, সেদিনই ধরা খাই। আজ ট্রেনে ওঠার আগেই লম্বা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করলাম।
এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর যেতে ৩৩ মিনিট সময় লাগল। যাত্রীদের প্রচুর ভিড়। ভিড় ঠেলে কে কার আগে গেট দিয়ে পার হতে পারে এ নিয়ে ছোটখাটো প্রতিযোগিতা চলছে। টিটি টিকিট চেক করে করে পার করছে। যাদের টিকিট নেই, তাদের আনসারদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আমি খুব ব্যস্ততা দেখিয়ে টিটির গায়ে ধাক্কা দিলাম। নাহ, আমাকে কিছুই বলল না। দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে ফিরে তাকাল।
কাহিনি কী, অন্য দিন টিকিট না কাটলে দূর থেকে ডাক দেয়। ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে। আজ এত কাছে ঘষাঘষি করছি অথচ কিছুই বলছে না। খুব রাগ হচ্ছে। গেট দিয়ে পার হয়ে আবারও ভেতরে এলাম। আরও জোরে একটা ধাক্কা দিলাম। এবার টিটি তেলের মধ্যে পানি পড়ার মতো ছ্যাৎ করে উঠে বলল, ‘ওই মিয়া ওই, দ্যাইখে চলাচল করতে পারেন না। আপনে বারবার ধাক্কা মারতাছেন ক্যান?’
আমি যে কত কষ্ট করে টিকিট কাটছি এইটা ওনাকে কীভাবে বোঝাই? একটা বার বললেই তো হয়, দেখি, আপনার টিকিট আছে? তাহলেই তো ঝামেলা শেষ।
‘ভাই, কিছু মনে করবেন না। টিকিট কাটছিলাম তাই আরকি ধাক্কা লেগে গেল।’
‘আপনে যে টিকিট কাটছেন হেইডাতো আমি দূর থেকেই বুঝতে পারছি। বারবার গায়ে ধাক্কা দিয়ে বোঝানো লাগব? দাঁড়ান, আনসারকে ডাকতাছি।’
দুবার ধাক্কা লেগেছে। আরেকটা বার ধাক্কা দিতে ইচ্ছা করছে। বিজোড় সংখ্যা না হলে খালে পড়তে পারে। তাই ওনাকে খাল থেকে তুলে উপকার করার জন্য বললাম, ‘ভাই, আরেকটা ধাক্কা দিই?’
এবার টিটি সত্যি সত্যি রেগে আগুন হয়ে বলল, ‘এই আপনের খবর আছে আজ। আপনে এখানেই দাঁড়ান। পেছনের দিকে ফিরে একজন আনসারকে ডাকল। সাদেকুল, এই সাদেকুল...’
আমি জামার বোতাম খুলে বুকের মধ্যে দুই-দুইটা ফুঁ দিয়ে মনে মনে বললাম, আইজ আমারে খাইছে!
শিক্ষার্থী, বাইতুস সালাম এরাবিক ইউনিভার্সিটি, উত্তরা, ঢাকা