আমরা বইয়ের ফেরিওয়ালা। বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান ফেরি করে বেড়াই। জীবিকার তাড়নায় লেইস ফিতা, তৈজসপত্র, মাটির বাসনকোসন, কাঁচা সবজি, প্রসাধনসামগ্রী ফেরি করে যেমন একজন মানুষ নিজের এবং জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করেন; আমরাও তেমনই পাঠের আসরের নামে জ্ঞানকে সমৃদ্ধি করতে বই ফেরি করছি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। উদ্দেশ্য, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মুদ্রিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। বই পারে একজন মানুষের চিন্তাভাবনা ও শক্তির জায়গাকে প্রসারিত করতে।
বন্ধুসভা প্রথম আলোর একটি পাঠক সংগঠন। আর পাঠচক্র বন্ধুসভার প্রাণ। ভৈরব বন্ধুসভা দীর্ঘ সাড়ে আট বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলমান রেখেছে পাঠচক্র। প্রতিটি পাঠের আসরে গড়ে ৩০ জন মানুষ উপস্থিত থাকেন। দলগত আসরে বই পড়া যে কতটা আনন্দের, তা সবার মধ্যে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
বছর শেষে যেমন নতুন বছর আসে, তেমনি নতুন কার্যকরী কমিটিও গঠিত হয় বন্ধুসভায়। পাঠচক্র ও পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক থাকেন এই পাঠচক্র চলমান রাখার নেপথ্যের কারিগর। ২০২০ সালে পদটিতে আমি নিজেও কাজ করেছি। যদিও করোনার ভয়াল সময়ের জন্য আসর জমাতে পারিনি। তবু ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে পাঠচক্র চলমান রাখি। ২০২৩ সালে এসে আমরা ‘বই জানি স্বপ্ন বুনি’ শিরোনামে ৬টি স্বপ্ন; অর্থাৎ ৬টি বই নিয়ে পাঠচক্র ফেরি করি ভৈরবের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রতিটি আয়োজন ভৈরব বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে এই আসর। ২০১৯ সালে ‘৭টি বই, ৭টি স্বপ্ন’ শিরোনামে একইভাবে পাঠের আসর হয়েছিল।
ভৈরবসহ আশপাশের জনপদে ভৈরব বন্ধুসভার মর্যাদা বাড়িয়েছে এই পাঠের আসর। আমাদের নিয়মিত ২০-২৫ জন বন্ধু আছেন এই জনপদে, যাঁদের সাংগঠনিক পরিচয় কেবলই বন্ধুসভা। পাঠচক্রের কারণে ভৈরব বন্ধুসভার বন্ধুদের সমীহ করেন সবাই। আমিও এই দলের একজন।
একজনের কথা বলতেই হবে। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ভৈরব বন্ধুসভার উপদেষ্টা সুমন মোল্লা—তিনি এই পাঠের আসরের নেপথ্যের কারিগর এবং আমাদের সব সময় অভিভাবকের মতো আগলে রাখেন। তিনি সব বিষয়ে ছাড় দিলেও বই পড়ার ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। নিয়ম করে বই পড়তে হবে, পাঠের আসর চলমান রাখতে হবে। নানা কাজে বিভিন্ন সময় আমাদের পাঠচক্র মিস হলেও তাঁর কখনো মিস হয় না।
কেউ যদি বলে, ‘কেন করো সংগঠন, বন্ধুসভায় কী এমন আছে?’ জবাবে বলি, যেখানে বই নিয়ে আলোচনা হয়, পাঠের আসর বসে, সেখানে যাব না তো কোথায় যাব! স্বপ্ন দেখি, একদিন ভৈরবটা হবে বই পড়ার শহর।
কার্যনির্বাহী সদস্য, ভৈরব বন্ধুসভা