স্মৃতির পাতার সোনালি দিন

উৎসবে লেখক (মাঝে)ছবি: তানভীর আহেম্মদ

প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজন ‘লেখক বন্ধু উৎসব’। লেখকদের নিয়ে উৎসবের বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে মনে তীব্র ইচ্ছা জাগে অংশগ্রহণের। উৎসব নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে মনের গহিনে। সেখানে কী কী হবে; আলোচকেরা কি লেখক হওয়ার কোনো সূত্র বলবেন? লেখক হওয়ার কি কোনো সূত্র থাকে? নিয়ম থাকে? তত্ত্ব থাকে? নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আর এই উত্তরগুলো খুঁজে পেতে আমাকে অংশগ্রহণ করতে হবে উৎসবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি গাইবান্ধা বন্ধুসভার সভাপতি ইমরান ভাইয়ের সঙ্গে। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। উপায় না পেয়ে শাকিব হাসান ভাইয়ের মুঠোফোনে কল দিই। কী করে অংশগ্রহণ করতে হবে লেখক বন্ধু উৎসবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেন। যখন গুগল ফরমটি পাই, তখনো মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে।

লেখক বন্ধু উৎসবে অংশ নিয়ে নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ মনে হচ্ছে। লেখকেরা টাকার জন্য লিখবে না, খ্যাতির জন্য লিখবে না, লিখবে মনের খোরাক পূরণের জন্য। স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে উৎসবের দিনটি।

সারা দেশের এত বন্ধু রেজিস্ট্রেশন করবে; আমি কি সুযোগ পাব? মন থেকে চাইলে নাকি সব পাওয়া যায়। সৃষ্টিকর্তাও আমার চাওয়া পূরণ করলেন। ২ মে সকালে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো অফিসে গেলাম উৎসবে যোগ দিতে। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁরা এসেছেন। সকালের নাশতার টেবিলে অনেকের সঙ্গে আলাপ হলো। সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল উৎসব।

কবি ও লেখক সাজ্জাদ শরিফ আমাদের কবিতা সম্পর্কে ধারণা দিলেন। কবিতার ছন্দ, মাত্রা, পরাবাস্তবসহ খুঁটিনাটি বিষয় বুঝিয়ে বললেন। অনেকে গদ্য ঢঙে কবিতা লেখেন লাইনের পর লাইন, সেগুলো যে অনেক সময় কবিতার বদলে অপকবিতা হয়ে ওঠে, সে সম্পর্কে জানালেন। কবিতায় যেমন ছন্দ থাকতে হবে, থাকতে হবে মাত্রা-মাধুর্য। আবোল-তাবোল লিখলেই কবিতা হয় না। কবিতার মধ্যেও যে বার্তা দেওয়া যায়, তা এই কর্মশালা থেকে শিখলাম।

প্রথম আলো কার্যালয়ে উৎসব শেষে সারা দেশের নির্বাচিত লেখক বন্ধুদের সঙ্গে আলোচক ও অতিথিরা
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা, ছোট দুঃখ, ছোট কথা—এ সংজ্ঞা ছোটগল্পের; সেটা আগে থেকে জানতাম। কবি ও লেখক শাহনাজ মুন্নী ছোটগল্প সম্পর্কে দিলেন চমৎকার ধারণা। প্লট, চরিত্র, ভাষা কেমন হবে; কীভাবে শুরু করব—এসব তিনি গুছিয়ে বললেন। কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক জিজ্ঞেস করলেন, আলোচকেরা কী কী বললেন? সাহস করে কথা বলতে গিয়ে আটকে গেলাম। একটু থেমে আবার সাহস নিয়ে বলা শুরু করলাম। বন্ধুসভার এটা একটা ম্যাজিক। বন্ধুসভা কথা বলতে শেখায়। সাহস জোগায়। আনিসুল হক যখন কথা বলা শুরু করলেন, মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। তিনি বললেন, প্রচুর বই পড়তে হবে, থাকতে হবে লেখার চর্চা। লেখালেখিকে সাধনা হিসেবে নিতে হবে।

প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজের কাছ থেকে জানতে পারলাম ফিচার লেখা সম্পর্কে। ফিচার কী। কীভাবে লিখতে হবে। সংবাদ ও ফিচারের মধ্যে পার্থক্য কী কী।

সেরা ১০ জন লেখককে প্রদান করা হয় সেরা লেখক সম্মাননা। যদিও আমি সেই তালিকায় নেই, তবু আক্ষেপ নেই। এত গুণীজনের সান্নিধ্য পেলাম, সেটা কম কিসের। লেখক বন্ধু উৎসবের আয়োজন মন ছুঁয়ে যায়। লেখক হিসেবে সবাই প্রতিষ্ঠা পায় না। আমিও লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাব কি না জানি না, তবে লিখে যাব নিরন্তর।

লেখক বন্ধু উৎসবে অংশ নিয়ে নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ মনে হচ্ছে। লেখকেরা টাকার জন্য লিখবে না, খ্যাতির জন্য লিখবে না, লিখবে মনের খোরাক পূরণের জন্য। স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে উৎসবের দিনটি।