প্রথম জীবনের ভুলের খেসারত তাকে সারা জীবন দিতে হবে জানে। এটাও ভালো করে জানে, পর কখনো আপন হয় না।
আমার ইন্দ্রিয়গুলো এর আগে প্রয়োগ করে দেখিনি। হয়তো কখনো ভেবেও দেখিনি। বোধ হয় সব এভাবেই শেষ হয়ে যাবে? চোখের সামনে কত অন্যায়-অত্যাচার দেখেও চুপ থাকতে হয়।
প্রতিবাদ করার ভাষা থাকলেও তা প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকে না। কারণ, পরিবার। প্রতিবাদ করতে গেলেই পুরো পরিবার হুমকির মুখে পড়ে। আত্মত্যাগ করেও কোনো লাভ নেই, সমাজ প্রতিবাদীকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীনে ফেলে।
দিন-রাত পরিশ্রম করে ডালিয়া স্বামীর সেবায় কোনো ত্রুটি রাখে না। এরপরও পরিবার থেকে শুনতে হয় নানা অপবাদের কথা। সমাজ কি কখনো মূল্যায়ন করবে না এই ত্যাগের, এই ভালোবাসার? কেন বারবার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কথা আসে? কেন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয় ডালিয়ার?
প্রথম জীবনের ভুলের খেসারত তাকে সারা জীবন দিতে হবে জানে। এটাও ভালো করে জানে, পর কখনো আপন হয় না। যতই মিষ্টি কথার বুলি তারা করুক না কেন, অন্তরের বিষের ঝোলা ঠিক তৈরি করে রাখে। একদিন ওদেরই বিপদে সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ডালিয়া। মায়ের দেওয়া শেষ চিহ্ন হাতের কাঁকন বিক্রি করে তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে। জোড়া লাগিয়েছে ভেঙে যাওয়া সংসার। আজ তারাই উঠেপড়ে লেগেছে ডালিয়ার এত কষ্টের সাজানো সংসার ভেঙে দিতে। কী লাভ এতে ওরাই জানে। তবে ডালিয়ার বোধগম্য হয় না।
পাগলের মতো বিলাপ আর কান্না ছাড়া কোনো কিছু করার নেই। ওর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে এমন কেউ নেই। একমাত্র স্বামী ছাড়া। আর আছে সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ বিশ্বাস। অগ্নিপরীক্ষা দিতে চায় না ডালিয়া। সব তিনিই দেখবেন এই ভরসা। জীবনে কারও ক্ষতি করেনি, খারাপ করেনি; আজ ডালিয়ার জীবন কি তিনি রক্ষা করবেন না!
সূর্যের আলোর বিকিরণে যতটুকু দেখা যায়, ততটুকুই দেখতে চায়। অনেক আলোর রোশনাই ডালিয়া দেখতে চায় না।
দুঃখ শুধু একটাই, যাদের আপন ভেবে কাছে টেনে নিয়েছিল, তারা আজ ওকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যত দূর দৃষ্টি প্রসারিত হয়, ততটুকুই অন্ধকার দেখে। এ অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা ওর। কাজকর্মে মন দিতে পারছে না। কুরে কুরে খাচ্ছে প্রিয়জনদের প্রতারণা। তারপরও অবশিষ্ট আছে সাহস। এটুকুই সম্বল করে ডালিয়া সংসার করতে চায়। টিকিয়ে রাখতে চায় সব সম্পর্ক। যে বিপদে আজ স্বামী আছে, সেখান থেকে বাঁচিয়ে আনতে চায়। চায় স্বাচ্ছন্দ্যময় একটি জীবন।
পাবে কি একটুখানি স্বস্তি? যে স্বস্তির মধ্যে খুঁজে পাবে হাজার ওয়াটের আলো।
সেগুনবাগিচা, ঢাকা