আমার চোখে স্বাধীনতা
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা নিয়ে নিজেদের ভাবনা ও কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান—এ বিষয়ে লিখেছেন সারা দেশের অসংখ্য বন্ধু। নির্বাচিত লেখাগুলো আজ প্রকাশিত হলো।
স্বাধীনতা কেবল একটি সীমান্তভিত্তিক সত্তা বা বাক্স্বাধীনতা নয়, এটি জীবন ও চেতনার প্রকৃত মুক্তি। স্বপ্ন দেখি এক মানবিক, সোনার বাংলাদেশের, যেখানে সত্য ও জ্ঞানের প্রবাহ থাকবে অবাধ, সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে এবং প্রত্যেক মানুষ নিজের বিশ্বাস ও মতাদর্শ নিয়ে নির্বিঘ্নে চলতে পারবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ক্ষমতার দম্ভে অন্যের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে পারবে না। সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিকতা হবে সর্বোচ্চ আদর্শ।
আফিফুল ইসলাম
বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা
স্বাধীনতা আমার চোখে এক উন্মুক্ত আকাশ, যেখানে চিন্তারা ডানা মেলে উড়তে পারে। এটি এক অনির্বাণ শপথ—ন্যায়ের পথে চলার, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার। এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে স্বাধীনতা শুধু পতাকার রঙে নয়, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও সম্ভাবনায় প্রতিফলিত হবে। যেখানে ভয়ের দেয়াল ভেঙে স্বপ্নরা ডানা মেলবে নির্ভয়ে।
রেশমা রিয়া
সাংগঠনিক সম্পাদক, পঞ্চগড় বন্ধুসভা
স্বাধীনতা দিবস শুধু অতীতের গৌরবগাথা স্মরণ করার দিন নয়, বরং আত্মত্যাগের এক গৌরবময় স্মারক। এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে সমৃদ্ধি, সাম্য ও ন্যায়বিচার থাকবে। দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন, শিক্ষিত, স্বনির্ভর এক জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত, মানবিক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
উলফাতুল মোস্তফা
সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার বন্ধুসভা
স্বাধীন এই বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। সবার জন্য উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে। প্রযুক্তি, কৃষি ও শিল্পে উন্নতি করে বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল হবে।
রুবেল হাসান
বন্ধু, জামালপুর বন্ধুসভা
কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতা যেমন চিরস্থায়ী নয়, স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে লড়াইও তেমন শেষ হওয়ার নয়। সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, অসহিষ্ণুতা—এগুলোই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের চরম শত্রু। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বমুক্ত নিরাপদ স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। সে জন্য শাসকশ্রেণির যেমন আন্তরিকতা প্রয়োজন, তেমনি আপামর জনতার প্রয়োজন সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধতা।
নুসরাত জাহান
বন্ধু, কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা
হুমায়ূন আহমেদ স্বাধীনতার পর লিখেছিলেন, ‘আমার দেশের মাঠি, দপদপাইয়া হাঁটি।’ অর্থ, নির্ভীক মুক্তি। স্বাধীনতা আমাদের দিক বিভাজনহীন রাষ্ট্র, নিরাপত্তা ও সঠিক বিচারব্যবস্থা। সব ধরনের উগ্রতা থেকে মুক্তি পাক এই শস্য–শ্যামল সুন্দর দেশটি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও মতাদর্শগত অমিলের পরেও সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকুক। দেশ ও সাধারণ মানুষের জন্য সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভালো কাজ করলেই বাংলাদেশ অন্যতম সেরা রাষ্ট্র হয়ে উঠবে।
আবু রেজা ইমরান
বন্ধু, ঝিনাইদহ বন্ধুসভা
স্বাধীনতা মানে শুধু শৃঙ্খল ভাঙা নয়, এটি আত্মমর্যাদা, সমান অধিকার ও উন্নতির প্রতীক। এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে বৈষম্যের দেয়াল নেই, প্রত্যেক নাগরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যায়বিচারে সমান সুযোগ পাবে। যেখানে নারীরা নিরাপদে পথ চলবে, শিশুরা স্বপ্ন দেখবে, আর তরুণেরা গড়বে এক সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠুক একটি ঐক্যবদ্ধ, প্রগতিশীল বাংলাদেশ।
আইরিন সুলতানা
সাধারণ সম্পাদক, পটিয়া বন্ধুসভা
স্বাধীনতা শব্দটি আকাশের চেয়েও বিশাল। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর ২ লাখ বীরাঙ্গনার অশ্রু গায়ে মেখে আমাদের সংগ্রাম আর গর্বের প্রতীক হয়ে এই শব্দ পাঁচ দশক ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের দেশটাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ কঠিন পথ। বারবার ঝড়ঝাপটা আসে। বারবার দেশটা পড়ে যায়, কিন্তু হেরে যায় না। উঠে দাঁড়ায় ফিনিক্স পাখির মতো। এই স্বাধীনতা দিবসে নিজেদের মধ্যকার আদর্শিক দ্বন্দ্ব, বিভেদ, স্বার্থের হানাহানির কালো মেঘ কেটে গিয়ে আকাশজুড়ে ঝকঝকে মানবতার সূর্য উঠুক।
নাজিফা তাজনুর
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়