একদিন ফিরব মায়ের গর্বের কারণ হয়ে

আঁকা: রতি পাশি

২০২৪ সালের শুরুতে যখন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলাম, মায়ের অস্তিত্বের গভীরতা বেশি করে বুঝলাম। ক্যানুলা দিয়ে রক্ত আমার উপচে পড়ত, কিন্তু দেখতাম চোখ ভিজত মায়ের। তিনি আমাকে কখনো অন্যদের সঙ্গে তুলনা করেননি; শিখিয়েছেন সবার জীবনের গল্প এক না।

মনে পড়ে ভর্তিযুদ্ধের কথা। সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে কেমন যেন বদলে গেল। আমার সঙ্গে আর আগের মতো কথা বলে না। মায়ের কোলে মাথা রেখে কেঁদেছিলাম। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, প্রকৃত বন্ধু কখনো বিপদে ছেড়ে যায় না। বুঝলাম, আমার জীবনে প্রকৃত বন্ধু মা ছাড়া আর কেউ নেই।

মা আমার প্রথম শিক্ষিকা। মায়ের হাতের লেখা অনেক সুন্দর, নিঃসন্দেহে সেই গুণটাই আমি পেয়েছি। শুধু হাতের লেখা নয়, ছবি আঁকার ক্ষেত্রেও মা আমার অনুপ্রেরণা। আমি শেষ বেঞ্চে বসা শিক্ষার্থী ছিলাম। কিন্তু মা চাইল তার মেয়ে একবার হলেও যেন স্কুলে প্রথম হয়। মায়ের বলা কথা আমার জন্য বেদবাক্য। তাই তার ইচ্ছাপূরণের জন্য রোল নম্বর ৬৪ থেকে ১২, ১২ থেকে ৬ এবং অবশেষে ৬ থেকে প্রথমবারের মতো পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম হই। আর কখনো পেছনে তাকাতে হয়নি। মায়ের জন্যই স্কুল পর্যায় শেষে রোল নম্বর এক নিয়ে বের হতে পেরেছি।

আজ আমি অনেক দূরে। প্রায় দেড় বছর হবে বাড়ি ফেরা হয়নি। কিন্তু জানো মা, মোবাইলের ওয়ালপেপারে তোমার আর বাবার ছবি দিয়ে রেখেছি। প্রতিদিন তোমার হাসিমাখা মুখ দেখি আর ভাবি, ঠিক একদিন ফিরব মায়ের গর্বের কারণ হয়ে। যে স্বপ্নপূরণের জন্য আমি আমার পৃথিবীকে ছেড়ে এসেছি, সে স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে।

তোমার মেয়ে যে সাম্রাজ্য বানাবে, তুমি হবে সেই রাজ্যের মহারানি। আমার আয়ু তোমার হোক, তবু তুমি বেঁচে থাকো মা। ভালো কর্মের ফল হিসেবে চাই তোমার সুস্থতা।

মগবাজার, ঢাকা-১২১৭