যে শহরে পুরুষের থেকেও নারীর আয় বেশি

ছবি: সংগৃহীত

সাধারণ কয়লাখনি এবং দারুণ সব রাস্তার জন্য বিখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য পশ্চিম ভার্জিনিয়া। কিন্তু এই রাজ্যের একটি শহর এখন ভিন্ন একটি কারণে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। দেশটির আদমশুমারির তথ্যের একটি নতুন পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম শহর মরগানটাউনের মেট্রোপলিটন এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যেখানে নারীরা তাঁদের সমবয়সী পুরুষের থেকেও বেশি আয় করে।

অঞ্চলটিতে ৩০ বছরের কম বয়সী একজন নারী কর্মীর ফুলটাইম কাজের বেতন তাঁর সমবয়সী একজন পুরুষ কর্মীর থেকেও ১৪ শতাংশ বেশি। এমনকি শহরটি এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম স্থানে ওয়াশিংটন ডিসি রাজ্যের ওয়েনাচি শহর। সেখানে এ হার ২০ শতাংশ। ১৬-২৯ বছর বয়সী নারীদের ওপর এই জরিপ চালানো হয়েছে।

সার্বিক বিবেচনা করলে এখনো যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। মার্কিন নারীরা গড়ে পুরুষ সহকর্মীর মজুরির প্রতি এক ডলারের বিপরীতে ৮২ শতাংশ আয় করে। কিন্তু ২৫০টি মেট্রোপলিটন শহরে গবেষণা করে দেখা গেছে, নারীদের মজুরি পুরুষ সহকর্মীদের সমান বা তার চেয়েও বেশি। এই নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে।

শিক্ষা এবং শিল্পায়ন

পিউর সিনিয়র গবেষক রিচার্ড ফ্রাই বলেন, কিছু পয়েন্ট আছে, যা এটির ব্যাখ্যা করতে পারে। প্রথমত, শিক্ষা অন্যতম প্রধান কারণ। যে স্থানগুলোতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি আয় করছে, সেগুলো মূলত দেশের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। সেখানে কম বয়সী নারীদের অধিকাংশই উচ্চ ডিগ্রিধারী। তিনি বলেন, ‘যে শহরগুলোতে তরুণীদের শিক্ষাগত দিক থেকে বড় সুবিধা রয়েছে, সেখানে বেতনের ব্যবধান কম হতে থাকে। স্নাতক ডিগ্রি শেষ হলে তাঁদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং বেতনের ব্যবধান কমে যায়।’

এই প্রতিবেদনে কিছুটা ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়েছে যে কেন ফ্লোরিডা ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ার কিছু নির্দিষ্ট শহরে নারীরা বেশি আয় করছেন। অথচ রাজ্য দুটিতে নারী-পুরুষের মধ্যে গড় মজুরির ব্যবধান ১৫ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ। ফ্রাই বলেন, ‘মরগানটাউন হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয় শহর। একইভাবে গেইনসভিল, ফ্লোরিডাসহ ২২টি মেট্রোর মধ্যে যেখানে মজুরি সমান বা নারীদের বেশি, সেখানেও অনেকগুলো বড় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব অঞ্চলে উচ্চ বেতনে চাকরির অফারের সংখ্যা বেশি থাকতে পারে। এ ছাড়া যেসব নারী স্নাতক শেষ করার পরেও অঞ্চলটিতে রয়ে গেছেন, তাঁরা আরও ভালো বেতন পাবেন। কারণটা শিক্ষাগত সুবিধা।’

ওয়েনাচি ও ওয়াশিংটনকে তালিকার শীর্ষে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে শিক্ষা বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়েনাচিতে পুরুষের আয় ১০০ শতাংশের বিপরীতে একজন নারীর বার্ষিক আয় ১২০ শতাংশ। ফ্রাই বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ওয়াশিংটনে ৬০ শতাংশ নারীর স্নাতক ডিগ্রি আছে।’ মজুরি ব্যবধানকে প্রভাবিত করার আরেকটি কারণ হলো চাকরি এবং শিল্পের ধরন। এই দুটি ক্ষেত্র নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে। ওয়েনাচির দ্বিতীয় বৃহত্তম নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হলো মেট্রোর স্কুল। মার্কিন নারীদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি শিক্ষামূলক চাকরি করে। অন্যদিকে উৎপাদননির্ভর প্রতিষ্ঠানে নারীদের অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশের নিচে।

মাতৃত্বে প্রভাব

যখন একজন নারী সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেন, তখন মজুরির ব্যবধান বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়েই এমনটা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও মাতৃত্বের কারণে নারীদের মজুরি কমে যায়। একজন নারী যখন মা হন, সমবয়সী পুরুষদের থেকেও কম মজুরি পান। ব্যবধানটা ১০০–তে ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ একজন পুরুষ ১০০ শতাংশ বেতন পেলে, প্রথমবার মা হওয়া সমবয়সী নারী সেটা পায় ৭০ শতাংশ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলেকজান্দ্রা কিলেওয়াল্ড বলেন, ‘মজুরিবৈষম্যের পরিসংখ্যানে বড় প্রভাব রাখে মাতৃত্ব। মা হওয়ার কারণে প্রতি ঘণ্টায় মজুরিতে ১০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি জরিমানা হয়।’

সুতরাং কোনো অঞ্চলে যখন একজন নারী দ্রুত মাতৃত্ব গ্রহণ করেন, তাঁকে মজুরিবৈষম্যের মধ্যে পড়তে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যে মজুরি ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। পুরো দেশে প্রথমবার মা হওয়া নারীর গড় বয়স ২৬ দশমিক ৩ বছর, সেখানে ইন্ডিয়ানা রাজ্যে এই গড় প্রায় ৩ বছর কম। যেখানে প্রথম মাতৃত্বের বয়স কম, সেখানে বৈষম্যও বেশি। বিপরীতও আছে। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও পেনসিলভানিয়ার মেট্রো অঞ্চলে নারীরা পুরুষদের থেকেও ২ শতাংশ বেশি আয় করেন। ম্যানহাটনে মাতৃত্বের গড় বয়স ৩১ বছরের বেশি।

‘দীর্ঘ সময় ধরে আমরা দেখছি, প্রথমবার মা হতে অনেক দেরি করছেন নারীরা,’ যোগ করেন কিলেওয়াল্ড। তিনি বলেন, ‘এর অর্থ দাঁড়ায়, আরও বেশি নারী সন্তান নিচ্ছেন না এবং কর্মক্ষেত্রে বেশি সময় কাটাচ্ছেন। এতে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন তাঁরা এবং মজুরিরও বৈষম্য হচ্ছে না। একই বয়সের পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিতে পারছে।’

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন তাহসিন আহমেদ