ডিপ্রেশন দূর করতে কোন ধরনের খাবার খাবেন

পুরুষেরও শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত। ছবি: অধুনা

প্রথমে জেনে নিই ডিপ্রেশন কী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ডিপ্রেশনকে কয়েকটি বিষয় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যেমন আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, দুঃখ ও অপরাধ বোধ করা, নিজেকে মূল্যহীন লাগা, ঘুম ও ক্ষুধায় বিরক্তি, ক্লান্তি ও দুর্বল মনোযোগ। ডিপ্রেশন একটি মানসিক অসুস্থতা। এটি অতিমাত্রায় এবং দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিলে মানসিক রোগ বলে বিবেচিত হয়। ব্যক্তিজীবনের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি খাবার, ঘুম, অনুভূতি, চাওয়া-পাওয়া, পারিবারিক সম্পর্ক সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব দেখা দেয়।

ডিপ্রেশনের কারণ
অনেক কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে যেমন জেনেটিক, জৈবিক, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, ব্যক্তিজীবনের অপ্রাপ্তি-অপূর্ণতা, পারিবারিক জীবনের অশান্তি-দ্বন্দ্ব, মাদক সেবন, হরমোনের পরিবর্তন ও শারীরিক অসুস্থতা অন্যতম। পাশাপাশি গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য ও পুষ্টি ডিপ্রেশনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাবে ডিপ্রেশন দেখা দেয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নামক হরমোনের পরিবর্তন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, কর্টিকোস্টেরয়েড, বিটাব্লকারসহ কিছু ওষুধ সেবনের কারণে দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ডিপ্রেশনের প্রকোপ দ্বিগুণ বেশি।

মস্তিষ্কে যা হয়
মস্তিষ্কের যে অংশগুলো মন-মেজাজ, চিন্তাভাবনা, ঘুম, ব্যবহার ইত্যাদি পরিচালনা করে; তাতে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ডিপ্রেশন দেখা দেয়। এর সঙ্গে জড়িত প্রধান উপকর্টিক্যাল লিম্বিক মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলো হলো এমিগডালা, হিপ্পোক্যাম্পাস ও ডর্সোমিডিয়ান থ্যালামাস।

মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের নিঃসরণ কমে গেলে, ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের লেভেল ভারসাম্যহীন হলে, কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে গেলে, থাইরয়েড, ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও টেস্টোস্টেরন হরমোন ভারসাম্যহীন হয়ে গেলে এবং শরীরে জিঙ্কের (যেটা শরীরে নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে) অভাব দেখা দিলে ডিপ্রেশন তৈরি হয়।

খাবারের মাধ্যমে যেভাবে ডিপ্রেশন দূর করা সম্ভব
খাবার শুধু শরীরে পুষ্টি জোগায় না, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে কেবল মুঠো মুঠো ওষুধ নয়, নজর দিতে হবে সঠিক ও পুষ্টিসম্মত খাদ্যাভ্যাসে। ওষুধ কিছুটা ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করলেও শরীরে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অন্যদিকে প্রাকৃতিক খাবারে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

কোন ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন
যেসব খাবার সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়াবে, ডোপামিন, থাইরয়েড, ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরনের ভারসাম্য রাখবে এবং কর্টিসল নিঃসরণ কমাবে; সেসব খাবার খেতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে—

* গরম দুধ: পুষ্টিবিদদের মতে, হালকা উষ্ণ দুধ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ হওয়ায় মন-মেজাজ স্থিতিশীল ও পেশি শিথিল রাখে।

* টমেটো: টমেটোতে প্রচুর আলফা-লিপোলিক অ্যাসিড ও ফলিক অ্যাসিড রয়েছে; যা শরীরে গেলে ডিপ্রেশন দূর করে।

* গ্রিন টি: এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং উপকারী এমিনো অ্যাসিড স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি দূর করে মন ভালো রাখে।

* কাজুবাদাম: এতে আরডিএর প্রায় ১১ জিঙ্ক রয়েছে। তাই এটি খেলে জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি হতাশা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর করে মন ভালো রাখে।

* টক দই: টক দই খেলে সেরোটোনিন নামক ফিল গুড নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরণ বেড়ে যায়; যা স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে সাহায্য করে।

* ফলেট সমৃদ্ধ খাবার: বিনস, শিম, মটরশুঁটি, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি খাওয়া।
* ভিটামিন বি৬,  ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার: মাছ, ডিম, স্যামন ইত্যাদি খাওয়া।

এ ছাড়া আপেল, জাম, ওটমিল ও সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খেলে ডিপ্রেশন দূর করা সম্ভব।

শিক্ষার্থী, খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়