শেষ চিঠি

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন। এ উপলক্ষে ভালোবাসার স্মৃতিগল্প পাঠিয়েছেন বন্ধুসভার বন্ধু ও পাঠকেরা। নির্বাচিত চারটি গল্প আজ প্রকাশ করা হলো।

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

বসন্তের সকাল। জানালার পাশে ফুলের বাগান, হরেক রকম ফুলের বিচিত্র সুবাস। সেই সুবাস ছড়িয়ে আছে ঘরময়। হাতে ধরা একগুচ্ছ পুরোনো চিঠি। তবে প্রতিটি অক্ষর আজও জীবন্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনই পরিচয় হয়েছিল জিনিয়ার সঙ্গে। সে ছিল কবিতার মতো, কখনো রহস্যময়, কখনো গভীর, আবার কখনো আনন্দের ঢেউ তুলত মনের মধ্যে। ওর হাতে সব সময় একটা ডায়েরি থাকত। লিখে রাখত অজস্র কবিতা। প্রথম কবিতাটি যখন আমাকে পড়তে দিল, তাতে লেখা, ‘রুদ্র, তুমি আকাশের সেই রং, যে সন্ধ্যায় মিশে যায় নদীর গভীরে; তুমি সেই সুর, যে বৃষ্টি নামলে মৃদু শব্দ বাজে...।’

আমি শুধু হেসেছিলাম। ও আমার হাসিতেই বুঝে গিয়েছিল, আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের চার বছর একসঙ্গে কাটিয়েছি। ক্লাস শেষে দুজন নির্জন লাইব্রেরির কোণে বসে গল্প করতাম, কবিতা পড়তাম। শহরের গলিতে হাঁটতাম, চায়ের কাপে ভাগ বসিয়ে বসন্তের স্নিগ্ধ সন্ধ্যা পার করতাম। ভালোবাসার প্রকাশ কখনোই করিনি। কিন্তু ওর চোখে উত্তর পেয়ে যেতাম।

জিনিয়া হঠাৎ একদিন বলল, ‘রুদ্র, আমি চলে যাচ্ছি, অনেক দূরে।’

সেদিন কিছুই বুঝতে পারিনি। কেবল জানতে চেয়েছিলাম, ‘কেন?’ সে বলেছিল, ‘আমার যেতে হবে। তুমি অপেক্ষা কোরো।’

সেটা ছিল আমাদের শেষ দেখা। এরপর কত বসন্ত কেটে গেল। ওকে খুঁজেছি, ওর কবিতার মধ্যে, পুরোনো দিনের গলিতে, প্রত্যেক মানুষের চোখে। কিন্তু ও আসেনি।

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেল। আমি অন্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে একটি অভ্যাস ছাড়তে পারিনি; ভালোবাসা দিবসে ওর শেষ চিঠিটা পড়া।

আজও জানালার পাশে বসে আছি, হাতে জিনিয়ার শেষ চিঠি। সেখানে লেখা, ‘রুদ্র, ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, সে শুধু রূপ বদলায়। যদি কোনো দিন ফিরে আসতে পারি, এই শহরের প্রথম বসন্তের দিনে, তুমি কি তখনো আমাকে মনে রাখবে?

তোমার জিনিয়া।’

পটিয়া, চট্টগ্রাম