মায়া,
শুনেছি তুমিও ভালো নেই। চোখের নিচে কালো দাগগুলো সাক্ষ্য দেয় তোমার বিনিদ্র রাতের কথকতা। দিনের ব্যস্ততা শেষে ঝুপ করে যখন সন্ধে নামে, যখন হুড়মুড় করে অন্ধকার নামে তোমাদের শহুরে দেয়ালে। তখন নাকি তুমিও বড্ড কুঁকড়ে যাও! ভীষণ ব্যথায় ছটফট কর? কেন আমাদের সঙ্গে এমন হলো, মায়া?
একদিন আমাদেরও শরৎ ছিল। সাদা মেঘফুল, আকাশের অসীমে নীলের বিস্তার ছিল। আমাদেরও ঝলমলে রোদ্দুরের ফাগুন ছিল। অথচ এখন আমাদের মায়ার ভিটেয় খরখরে চৈত্রের রোদ। দহনে দহনে পুড়ে গেছে বুকের সবুজ। দাবদাহে শুকিয়ে গেছে একটা সহজিয়া নদী। তুমি চলে যাওয়ার পর লুটিয়ে পড়েছে চায়ের কচি কুঁড়িগুলো। রোদের তীব্রতায় মাতাল এক গন্ধ ছড়ায় বাগানে বাগানে। কেবল আমরা আর কোথাও নেই!
অথচ কী তীব্রভাবে একদিন আমরা ছিলাম! সেদিন কনে দেখা আলোয় তুমি আমার বুকের ওপর মাথা রেখে দেখেছিলে পাখিদের নীড়ে ফেরা। বনফুলের লাজুকতা ভেঙে সেদিন তুমি মেলে ধরেছিলে সুন্দরের চারু কাব্য। আমি সেই পঙ্ক্তি পড়ে পড়ে একদিন কবি হয়ে ওঠলাম। তারপর সবাই আমাকে কবি নামেই চিনে।
এখন আমিও রাত জাগি। কাগজের বুক কেটে লিখে যাই মায়ার কাব্য। মায়া—আমার প্রশান্তির নাম। বেঁচে থাকার অপার এক ইচ্ছেবোধ। তুমি চলে যাবার পর আমি আর প্রেমিক থাকিনি। মানুষের মতো নতুন ঘর খুঁজিনি। নতুন কাউকে বুকের অতলে লুকাতেও পারিনি। আমি কেবল তুমি নামের তসবিহ জপে জপে কবি হয়েছি। ১৫ ফেব্রুয়ারির কথা তোমার মনে পড়ে? কী রংচটা একটা দিন ছিল! পাখিডাকা ভোর, দূর্বাঘাসে শিশিরের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা, ডিমের কুসুমের মতো সূর্যের আগমন—এমন সকাল আর কি এসেছিল আমাদের জীবনে? এমন কাব্যিক ব্যঞ্জনাময় মুহূর্ত আর আসবে না, জানি। তোমার আসার পথে আমার অপেক্ষার তুমুল আর্তনাদ। তোমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে উড়ে গেল অযুত ফানুস। ফুলের মতো ফুটেছিল চোখের তারায়। তোমাকে সেদিনই আমি প্রথম পেয়েছিলাম। তোমাকে সেদিনই আমি প্রথম হারিয়েছিলাম। তারপর আর কখনো তোমাকে পাইনি।
আজও মাঘী পূর্ণিমায় তোমাকে চাই। আমার জাগতিক প্রার্থনায় কেবল তোমাকেই চাই। শেষ বিকেলের আলোয় চা–বাগানের সাপের মতো আঁকাবাকা লাইন ধরে তোমার সঙ্গে হেঁটে যেতে চাই অনেকটা পথ। অথবা কাশফুলের ভিড়ে ছোট্ট সেই পাখির গান শুনে আমরা মুগ্ধ হয়ে আবারও বলতে চাই—জীবন অনিন্দ্য সুন্দর!
মায়া, তোমাকেই ভালোবাসি। গতকালের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আগামীকালের চেয়ে অনেক অনেক কম।
ইতি
কবি।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মাধবপুর, হবিগঞ্জ