রহস্যে ভরা আনন্দময় শৈশবের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

রকিব হাসানছবি: কবির হোসেন

কিশোর, মুসা ও রবিন—এই তিনজন শৈশবের সঙ্গী। রহস্যের বেড়াজালে সত্যিটা উন্মোচন করতে তিনজনের মেধা ছিল একসূত্রে গাঁথা। বলছি তিন গোয়েন্দা চরিত্রের কথা। তাদের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ট্রেনে। নানুবাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থেকে ফিরছিলাম, হকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করি ‘তিন গোয়েন্দা ভলিউম-১’। পড়তে গিয়ে গল্পে ডুবে যাই। চারপাশের শব্দ, কোলাহল একপাশে রেখে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাই। সেই থেকে শুরু।

তিন গোয়েন্দা সংগ্রহ করতে সাইকেলে করে চলে যেতাম ভৈরব রেলস্টেশনের বুকশপে। ‘রেলওয়ে বইঘর’—একমাত্র এই দোকানেই পাওয়া যেত। পাঠ্যবই ছাড়া অন্য বইগুলো ছিল তখন আউটবই। অনেকটা লুকিয়েই পড়তে হতো। প্রতিটা চরিত্র জীবন্ত হয়ে কল্পনাকে বাস্তবতায় এনে দিত, মনে হতো আমিও তাদের একজন। আমার পছন্দের চরিত্র ছিল কিশোর পাশা। কিশোরের কোঁকড়া চুল, গভীর কালো চোখে কোনো কিছুই তার নজর এড়ায় না। গভীর দৃষ্টিতে কিশোরের পর্যবেক্ষণ আমারও অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেয়। তাই একটা বই শেষ করার পর টাকা জমিয়ে চলে যেতাম নতুন আরেকটি কিনতে।

রকিব হাসান তিন গোয়েন্দার মাধ্যমে নব্বইয়ের দশক ও তাঁর পরবর্তী সময়ে অনেক পাঠক তৈরি করেছেন। তিনি অনেক লেখকের অনুপ্রেরণাও বটে।

একদিকে চরিত্রগুলো যেভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠে, তেমনি লেখককে দেখার জন্যও মনটা উতলা হয়ে ছিল। কিন্তু বইয়ের কোথাও লেখকের ছবি নেই, পত্রিকাতেও নেই। তখন ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিল না। লেখককে দেখার ইচ্ছা আড়ালেই রয়ে গেল।

গল্পের চরিত্রগুলোর মতো লেখক রকিব হাসান ব্যক্তিজীবনেও রোমাঞ্চপ্রিয়। হুমায়ূন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ পড়ে তিনিও মনস্থির করলেন সেন্ট মার্টিনে বাড়ি বানাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝড়ের মধ্যে দিয়েই পোঁছালেন টেকনাফে। তখন ভাটা চলছিল, ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় তাঁর পা ডেবে যায়, হাঁটছেন আর হাঁটছেন। একসময় বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আমি যাব সেন্ট মার্টিন, তোমরা আমাকে সুন্দরবনে ঢোকাচ্ছ কেন?’ পাশের জন বলল, ‘চলেন!’ এ রকম করতে করতে বহুদূর নিয়ে যাওয়ার পর নাফ নদী দেখা গেল। এ নদীর ঠিক মাঝখানে একটা ট্রলার। ট্রলারে করে পোঁছালেন সেন্ট মার্টিনে।

‘থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ সিরিজের বই থেকেই রকিব হাসান তৈরি করেছিলেন তিন গোয়েন্দা চরিত্র। তিনটি চরিত্র আমাদের পাঠকের মধ্যে এক হয়ে যায়। রকিব হাসান তিন গোয়েন্দার মাধ্যমে নব্বইয়ের দশক ও তাঁর পরবর্তী সময়ে অনেক পাঠক তৈরি করেছেন। তিনি অনেক লেখকের অনুপ্রেরণাও বটে।

শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার জন্য কিছুদিন আগেই তিন গোয়েন্দার আরও কয়েকটি ভলিউম সংগ্রহ করি। তাঁর প্রয়াণে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। রহস্যে ভরা আনন্দময় শৈশব আমাদের দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বন্ধু, ভৈরব বন্ধুসভা