আজও সেই দিন

মনে পড়ে তোমায়। মডেল: সুমন ও মাইমুনাছবি: রোহান

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। মনে কি আছে তোমার, তানিয়া? এই দেখ তোমার জন্য আমি একগুচ্ছ গোলাপ এনেছি, তোমাকে চমকিয়ে দেব বলে। জানো, আজ আমার অতীতের কথা মনে পড়ছে। এই তো সেদিন তোমার সঙ্গে কলেজে পরিচয়। তারপরে চোখে চোখে কত কথা, একসময় ভালোবাসাও হয়ে গেল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরের কথা আজও ভুলিনি। তুমি আমাকে কত শাসন করতে। রেগে বলতে, ‘এই নাঈম, তুমি এত দেরি করে এলে কেন? জানো না, অপেক্ষার সময় অতিবাহিত হতে চায় না, আমার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে একদম ভালো লাগে না। আচ্ছা, তুমি কি আর একটু আগে আসতে পারো না? ওহ্ ভুলেই গেছি, বাবা তোমাকে সেদিন দেখেছে, তোমার অনেক প্রশংসা করল। তুমি নাকি খুব ভদ্র ছেলে আর দেখতেও নাকি পছন্দ করার মতো!’

এসব কথা বলে তুমি যেন একটু লজ্জা পেলে। আমার হাত ধরে বলেছিলে, নাঈম, একটা গান গাও তো। তোমার কথা ফেলতে পারতাম না। আমার এই ধ্বজা ভাঙা সুরে একটানা কয়েকটি গান শোনাতাম। তুমি নিজে নিজেই হাততালি দিতে আর আমার গানের প্রশংসা করতে। আচ্ছা তানিয়া, তোমার কি মনে পড়ে, পদ্মার পাড়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা? তুমি সারা রাস্তা আমার হাত ধরে ছিলে। আমি বললাম, এই পাগলি, লোকে কী বলবে? জানো, আমার মা তোমাকে যেতে বলেছে। তুমি অধীর আগ্রহে বললে, কেন? আমি অবাক হতাম, একজন এমবিএ-এর ছাত্রী হয়েও সে এটা বোঝে না! আমি তোমার হাতে হাত রেখে বললাম, তোমার আর আমার এই দুখানা হাত এক করে দিতে চায়। তুমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলে।

আচ্ছা, তোমার কি মনে পড়ে, তোমার সঙ্গে আমার যেদিন প্রথম দেখা হয়, সেদিনও ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। আমি তোমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম বলে তুমি আমাকে বলেছিলে, এই যে মিস্টার, এভাবে আমার দিকে গরুর মতো তাকিয়ে আছেন কেন? আমি বললাম, ম্যাডাম গরু তো অবলা জীব, একে উপদেশ দিয়ে লাভ কি? শুধু বৃথা সময় নষ্ট। তুমি আমার কথা শুনে একগাল হেসেছিলে। আমি তোমার হাসিতেই যেন ঝুলে গেলাম। আচ্ছা, তোমার কি মনে আছে, আমাদের আবার সেই স্থানেই দেখা হয়েছিল। আমিই তোমার সঙ্গে আগে কথা বলেছিলাম, তুমি আবার হেসেছিলে এবং বলেছিলে কালও আবার সেখানেই আসতে। এভাবে কথা বলতে বলতে দুজনের মনের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি হয়ে গেল। আমাদের রেজাল্ট বের হলো, ভালোই রেজাল্ট হলো আমার। তুমি একদিন আমাদের বাড়িতে এসে বললে, এখন একটা চাকরি নিয়ে নাও। আমি বললাম, এখনি চাকরি কেন, কয়েক দিন যাক না তারপর চাকরি করব। তুমি রেগে বললে, তাহলে আমাকে হারাতে হবে। আমার বাবা কোনো বেকার ছেলের হাতে তাঁর মেয়েকে তুলে দেবেন না। তুমি কথাগুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলে। আমি তোমার চলে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখলাম। আমি নিজে নিজেই বললাম, সত্যি, এই সময় একটা চাকরি দরকার।

আমি চাকরি খুঁজতে শুরু করলাম, পেয়েও গেলাম একটা। আমার মা তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলে দুজনের বিয়ে ঠিক করল। তুমি কি ভুলে গেছ তানিয়া, সেদিন কত তারিখ ছিল। আমি কিন্তু ভুলিনি, সেদিনও ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। আমাদের বিয়েতে কত মজা হলো, তুমি গাড়িতে চড়েই আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলে। আমার কাঁধে রেখেছিলে তোমার মাথা আর আমি তোমার হাত ধরে রেখেছিলাম। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে আমাদের গাড়িটিকে ধাক্কা দিলে আমরা ছিটকে পরে গেলাম। জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি আমি হাসপাতালে। তোমার কথা বলতেই সবাই কান্নায় ভেঙে পরল।

জানো তানিয়া, আমার চোখগুলো খুব অবাধ্য হয়েছে। তোমার ছবি দেখলেই পানি চলে আসে। ঘরে তোমার ছবিটা বড় করে বাঁধিয়ে রেখেছি বলে অনেকে অনেক কথা বলে। আমি নাকি তোমার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো কথা বলি। মা আমাকে কত করে বলেছিল, আর একটা বিয়ে কর। আচ্ছা তানিয়া, বলো তো, আমার পক্ষে কি তা সম্ভব?

সাধারণ সম্পাদক, পাবনা বন্ধুসভা