সমাজের বাতিঘর প্রথম আলো

প্রথম আলো আসছে। পত্রিকা প্রকাশের আগে এক বুলেটিনে আঁকা শিশির ভট্টাচার্য্যের কার্টুন। অক্টোবর ১৯৯৮

তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। সারা দিনে যা-ই করি না কেন, প্রথম আলো পত্রিকা পড়তেই হবে। যত রাতেই হলে ফিরি না কেন; রিডিং রুমে গিয়ে প্রথম আলোয় চোখ বোলাতেই হবে; না হলে ভালো ঘুম হবে কী করে? শুধু আমি নই, আমার সময়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের অনেক বন্ধুদের এমন দেখেছি।

প্রথম আলো পত্রিকার প্রচ্ছদ, কার্টুন, বর্ণবিন্যাস, শব্দচয়ন, সংবাদের বৈচিত্র্য, ফিচার, রিপোর্টারদের সাহসিকতা, কলাম লেখকদের বিশ্বজনীন লেখার মান আমাকে মুগ্ধ করেছে। বেসিক আলী, বাসার ভাই প্রথম আলোর অনন্য সৃষ্টি।

তৃণমূলের সংবাদ তুলে আনার পদ্ধতি, মানুষের জীবনযুদ্ধ জয়ী হওয়ার গল্প, মানুষের কষ্টের কথা, হতাশার কথা, ভালোবাসার কথা, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় অভিভূত করেছে। মানুষের পাশে থাকার আহ্বান দেখেছি প্রথম আলোয়। পত্রিকাটিতে প্রকাশিত কিছু সংবাদ পাঠের রেশ থেকে গেছে কয়েক দিন পর্যন্ত।

প্রথম আলোই বাংলাদেশে প্রথম নাগরিক সংবাদ বিভাগের মাধ্যমে নাগরিকদের সাবলীল লেখা ও ছবি তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। এই লেখা ও ছবি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কথা, এই দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরছে। প্রবাসী লেখকেরাও তাঁদের অনুভূতি, অভিযোগ ও ভালোবাসা নাগরিক সংবাদ বিভাগে প্রকাশ করতে পারছেন।

শোষিত-শাসক যে-ই হোক, প্রথম আলো সত্যের পথে। প্রথম আলো সাহসিকতার সঙ্গে নিপীড়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে। নিপীড়কদের পরিচয় প্রকাশ করতেও দ্বিধা করে না।

প্রথম আলো কি শুধুই একটা পত্রিকা? সংবাদ ছেপেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? প্রথম আলো একজন সাধারণ সৃজনশীল মানুষের বাতিঘরের মতো কাজ করে। প্রথম আলো বন্ধুসভা, বিজ্ঞানচিন্তা, গণিত অলিম্পিয়াড, জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা, বন্যার্তদের ত্রাণ প্রদান, শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণ, মাদকবিরোধী র‍্যালি ও কনসার্ট, কিশোর আলো ম্যাগাজিন, প্রথম আলো ট্রাস্ট, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার; প্রথম আলো পত্রিকায় ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে। এই উদ্যোগ তরুণসমাজকে সঙ্গে নিয়ে সামনের পথে চলা। শুধু পত্রিকা বিক্রি বা সংবাদ পরিবেশন নয়; বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য প্রথম আলো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।

প্রথম আলো বর্ষপূর্তি সংখ্যার লেখা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ১০ বছরের বেশি সময় প্রথম আলো বর্ষপূর্তি সংখ্যা পড়ছি। যতই পড়ছি, ততই সমৃদ্ধ হচ্ছি। সেরা লেখক, সেরা বিজ্ঞানী, সেরা সাহিত্যিক, সেরা নাট্যকার, সেরা ক্রীড়াবিদ, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ দেশসেরা মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ লিখে যাচ্ছেন। তাঁদের ব্যক্তিজীবনের অজানা ঘটনা যেমন আমাকে আন্দোলিত করছে, তেমনি মনে তাঁদের সাফল্য দোলা দিয়ে গেছে।

সুনীলের প্রথম আলো যেমন এক অনবদ্য উপন্যাস, তেমনি প্রথম আলোও বাংলাদেশের এক অনন্য পত্রিকা। সুনীলের প্রথম আলো পড়ার পরে অনেক দিন এর রেশ ছিল। যখন থেকে প্রথম আলো পত্রিকা পড়া শুরু করেছি, আর বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রথম আলো সংবাদ উপস্থাপনায় এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। জীবন বদলে দেওয়ার মতো খবর এখানে পরিবেশন করা হয়। ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ স্লোগানের সারথি আমরাও হতে পারি। প্রথম আলো নতুন পাঠক তৈরি করেছে, পাঠক ধরে রেখেছে এবং পাঠককে লেখক হিসেবেও তুলে ধরেছে। সমাজের জন্য প্রথম আলো বাতিঘরস্বরূপ।