কিছু সময়ের জন্য সবকিছু স্বপ্ন মনে হতে লাগল

অতিথি ও আলোচকদের কাছ থেকে ‘সেরা লেখক বন্ধু’ সনদ গ্রহণ করছেন লেখক
ছবি: তানভীর আহেম্মদ

বন্ধুসভার ফেসবুক পেজে ‘লেখক বন্ধু উৎসবের’ পোস্ট দেখার পর থেকেই মনের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হলো। মনে মনে ভাবলাম, ইশ্‌! যদি এই উৎসবে যেতে পারতাম। আমিও মাঝেমধ্যে লিখি এবং কিছু বন্ধুসভার ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। এরপর নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় উৎসবের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় মনে পড়লে তৎক্ষণাৎ গুগল ফরম পূরণ করে ফেলি। এর কয়েক দিন পর আমন্ত্রণপত্র ও ফোনকল পাই। উৎসাহ শুরু তখন থেকেই।

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিল না। এরই মধ্যে যশোর বন্ধুসভার সৌমেন্দ্র গোস্বামী, ভৈরব বন্ধুসভার জান্নাতুল মিশু, নীলফামারী বন্ধুসভার নিপুন কুমারসহ কয়েকজনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ হলো। তারাও উৎসবে অংশ নেবে।

অবশেষে অপেক্ষার প্রহরও শেষ হয়। ২ জুন ভোর ৬টায় নরসিংদী রেলস্টেশন থেকে চট্টলা মেইল ট্রেনে উঠে বসলাম, গন্তব্য ঢাকা। দুই ঘণ্টার যাত্রা শেষে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে পৌঁছাই। সারা দেশ থেকে আসা অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো, কথা হলো। ফেসবুকে অনেকের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় থাকলেও এবারই প্রথম সামনাসামনি দেখা, তাই আনন্দও হচ্ছিল দ্বিগুণ।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদিক ভাই পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ওনার কথা বলার ভঙ্গিমায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

কবি ও লেখক সাজ্জাদ শরিফ কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন। জানতে পারি কবিতার নানা দিক। ছবি, কথা ও বিভিন্ন কবিতার লাইনের মাধ্যমে উপস্থাপন করলেন কবিতাচর্চার খুঁটিনাটি। গল্প লেখার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও লেখক শাহনাজ মুন্নী। সহজ বোধগম্য ভাষায় তথ্যমূলক গল্প লেখায় গুরুত্ব দিতে হবে। মনোরোগ চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল মানুষের মনের ভেতরের কথাগুলো গল্পাকারে তুলে ধরার নানা দিক বিশ্লেষণ করেন। কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক লেখক হতে হলে কী করতে হবে, সেসব নিয়ে কথা বলেন। লেখক হতে চাইলে এই পেশাটির প্রতি ভালোবাসা, সম্মান থাকতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করার পাশাপাশি দৃঢ় মনোবল ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আর বই পড়ত হবে প্রচুর।

উৎসবে লেখক (মাইক হাতে দাঁড়ানো)
ছবি: আশরাফুল আলম

এরপরই ‘সেরা ১০ লেখক বন্ধু’র নাম ঘোষণা শুরু হলো। পাব না জানি, তাই এ সময় পাশে বসা অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। কিন্তু হঠাৎ শুনতে পেলাম সঞ্চালক ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘এবার পুরস্কার নিতে আসবেন নরসিংদী থেকে হৃদয় গোপাল সাহা।’ নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। জীবনের প্রথম লেখক স্বীকৃতি! সম্মাননা তুলে দিলেন প্রিয় লেখক আনিসুল হক। কিছু সময়ের জন্য সবকিছু স্বপ্ন মনে হতে লাগল। উৎসবে এসে লেখকদের কথা শুনব, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাব, লেখক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে, আড্ডা হবে—উৎসাহের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। সেরা ১০ লেখক বন্ধুর মধ্যে একজন হব, তা কখনো কল্পনা করিনি। প্রথম আলো বন্ধুসভার প্রতি কৃতজ্ঞ।

দুপুরের খাবারের পর বিকেলের সেশনে প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজের ‘ফিচার’ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা অনেক কঠিন বিষয়কে সহজ করে দিল। সাহিত্যের এই ধারা নিয়ে মনের ভয়ও দূর হলো।

আয়োজন এত সুন্দর ও সমৃদ্ধ ছিল যে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল কখন হলো, বুঝতেই পারলাম না। প্রিয় লেখকদের আলোচনা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় দারুণ কিছু সময় উপভোগ করি। ফিরে আসার সময় মনে হচ্ছিল, উৎসবটি যদি আরও দীর্ঘ হতো!