আরও একটি বছর মানুষের জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে। এক দিন পরই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সবাই। অথচ এ নিয়ে মনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বড় হওয়ার পর থেকেই উচ্ছ্বাসটা হারিয়ে গেছে। মনে হয়, কেবল ক্যালেন্ডারের পাতায় সালটাই পরিবর্তন হয়; মানুষের জীবনে তো আর বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসে না। যাঁরা কর্মজীবী, ছুটির দিন না হলে তাঁদের কাছে ৩১ ডিসেম্বর যেমন, ১ জানুয়ারিও তেমন! উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার জন্য বিশেষ কোনো উপলক্ষ আসে না।
কেউ কেউ আবার সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বন্ধু-পরিবারকে নিয়ে গেটটুগেদার কিংবা ঘরোয়া পার্টির আয়োজন করে; রাতে আতশবাজি ফুটায়, ফানুস ওড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শুরুর দিকে এসব নিয়ে আমারও কিছুটা আগ্রহ ছিল। পরে দেখলাম আতশবাজি, ফানুস—এসব মানুষকে ক্ষণিকের আনন্দ দিলেও পশুপাখিদের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অসংখ্য পশুপাখি মৃত্যুবরণ করে, পঙ্গু হয়; বছর দুই আগে ঢাকায় এক মানবশিশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এর পর থেকে বছরের শেষ দিনকে আর বিশেষভাবে দেখি না; বরং পরিচিতজনদের সচেতন করার চেষ্টা করি, যাতে কেউ আতশবাজি না ফুটায় এবং ফানুস না ওড়ায়।
বাল্যকালে বছরের এই সময়টা ছিল সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। তখন আতশবাজি বা ফানুস—কোনোটার সঙ্গেই পরিচিত ছিলাম না। পশুপাখিরাও মানুষের দ্বারা ক্ষতির শিকার হতো না। মফস্সলে বড় হয়েছি। ৩০ বা ৩১ ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হতো। শীতকালীন ছুটি শেষে এই দিনটার অপেক্ষায় থাকতাম। কখনো রোল নাম্বার এক-দুই না হলেও তিন বা চার নাম্বার হতাম। ভালো ছাত্রের কাতারে থাকতাম বলে আব্বা কখনো কিছু বলত না। প্রতিটি শ্রেণির সেরা তিনজনকে পুরস্কৃত করা হতো। অধিকাংশ শ্রেণিতেই রোল নাম্বার তিন হওয়ায় আমিও পুরস্কার পেতাম।
তারপর আসত ১ জানুয়ারি। নতুন বছরের প্রথম দিন। নতুন শ্রেণিতে প্রথম ক্লাস, সঙ্গে নতুন বই। সকালে সিরিয়াল ধরে নতুন বই সংগ্রহ করার অনুভূতি অন্য রকম। নতুন বইয়ের সেই ঘ্রাণ এখনো অনুভব করতে পারি। সবচেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ। প্রথম দিন ক্লাস তেমন হতো না। একটি ক্লাস হতো, তবে কোনো পড়াশোনা নয়। পুরোটা সময় পরিচয় পর্ব ও গল্প-আড্ডায় শেষ হয়ে যেত।
হারানো দিন আর ফিরে আসবে না। সেই উচ্ছ্বাসও আর পাব না। পশুপাখি ও মানবশিশুর ক্ষতি হয় বলে দেশে নতুন বছর উদ্যাপনের যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে, সেটাও আমার পছন্দ না। সর্বোচ্চ পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা যায়। আবার এসব ছাড়াও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো যায়। জীবনকে উপভোগ করা যায়। সবার জীবনে মঙ্গল হোক।