সন্তানের নেতিবাচক ব্যবহারের জন্য আপনি দায়ী নন তো!

সন্তানের সামনে মা–বাবার ঝগড়া সন্তানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ​মডেল: সাদিয়া, তারেক ও আরিয়ানছবি: সুমন ইউসুফ

অধিকাংশ পিতা-মাতার কাছ থেকে একটা অভিযোগ সচরাচর পেয়ে থাকি, ‘আমার সন্তান আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না।’

প্রথমে জেনে নিই আচরণ বা ব্যবহার বিষয়টা কী। আচরণ হলো মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যে বৈশিষ্ট্য পিতা-মাতা তাঁর সন্তানকে ছোটবেলা থেকে শেখান।

ছোটবেলায় শিশুর হাতে বাল্যশিক্ষা বই তুলে দিয়ে আমরা বলি, ‘সদা সত্য কথা বলিবে’, ‘মানুষের উপকার করিবে’, ‘জীবে দয়া করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’। এ ছাড়া কিছু সামাজিক আচরণ যেমন সালাম দেওয়া, অন্য কারও বাজার ধরে দেওয়া, অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ইত্যাদি শেখাই। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো এই শিক্ষাগুলো আপনি সবার সঙ্গে করার জন্য শেখাচ্ছেন নাকি শুধু নিজের পরিবারের পছন্দের মানুষের সঙ্গে করার জন্য শেখাচ্ছেন?

আমরা অনেক সময় পারিবারিক দ্বন্দ্ব হলে সন্তানদের বলি, তুমি তোমার ওই চাচা-মামাকে দেখলে সালাম দেবে না, বিরূপ মন্তব্য করবে, টিটকারি দেবে ইত্যাদি। সন্তানের সামনে অন্যের মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা বলা, অন্যের ছেলে সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে অনেক সময় দ্বিতীয়বার ভাবি না। এমনকি এ ধরনের কাজে অনেক সময় সন্তানদেরও ব্যবহার করা হয়।

এ ধরনের কাজগুলো দিয়ে মনের অজান্তে সন্তানের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব ঢুকিয়ে দিচ্ছেন পিতা-মাতা। সন্তান হারিয়ে ফেলছে তার বাল্যশিক্ষা। কারণ, বইয়ের বিদ্যার সঙ্গে বাস্তব জীবনে তারা কোনো মিল খুঁজে পায় না।

একবার ভাবুন তো সন্তানের সঙ্গে আপনি ভালো ব্যবহার করেন নাকি তুচ্ছ–তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন, অন্যের সামনে অপমান করেন, সন্তানের অপারগতাকে হেয় করেন। আপনার এ ধরনের আচরণ কিন্তু তার মধ্যে একটা সময় ঢুকে যাবে। আচ্ছা ভেবে দেখুন তো সন্তান আপনার কাছে মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয় নাকি শুধু সন্তান হিসেবে।

প্রশ্নটা কঠিন। এর চেয়ে বেশি কঠিন পিতা-মাতা হিসেবে সন্তানের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে আচরণ। পাঠ্যপুস্তকের বিদ্যাগুলো পিতা-মাতাকেও মেনে চলতে হবে। তাহলে সন্তানের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠবে না।

সভাপতি, রাউজান বন্ধুসভা ও প্রভাষক, নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ, রাউজান, চট্টগ্রাম