তোমার ছোঁয়ায় ফাগুন আসে
পরিমিত ও মমত্ববোধের জায়গা থেকে বসন্তের সমাগমে তোমাকে ভালোবাসি। বসন্ত এলেই ফুলে ফুলে ভরে যায় প্রকৃতির চারপাশ। শিমুল আর পলাশ ফুলের সৌন্দর্যে মোহিত হয় মানব–মন। কোকিলের মিষ্টি গানের সুরে দখিনা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যায় পৃথিবীর অবয়ব। মরা নদীতে জোয়ার আসে বসন্তের আগমন হলেই। পাতাশূন্য গাছগুলো ফিরে পায় তার সৌন্দর্য। অনুর্বর জমিগুলো উর্বর হয়ে ওঠে ফাগুনের বৃষ্টিতে। চৈতি রোদের পরশ পেলেই তোমাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা ক্রমেই বেড়ে যায়। তোমার এক নিমেষের শূন্যতা বাড়িয়ে দেয় হৃদয়ের হাহাকার। চোখের পাতায় নামে শ্রাবণের বারি বর্ষণ। ঠোঁটে ঠোঁটে আলিঙ্গন না হলে বৃথা লাগে বসন্তের সাজানো সব আয়োজন। তোমাকে কাছে পেলে ভরা নদীর মতো জোয়ার আসে ক্ষণে ক্ষণে। তুমি চোখ মেলে তাকালেই ফাগুন আসে মনের বাগানে। মনপ্রাণ ছুঁয়ে যায় তোমার নান্দনিক হাসির কলরবে।
যে জননীর গর্ভে তুমি জন্ম নিয়েছ, তাকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই লক্ষাধিক বার। তোমাকে কাছে না পেলে আমি হাসতে ভুলে যেতাম। ম্লান হতো বেঁচে থাকার ইচ্ছাগুলো। হয়তো অকালেই ঝরে যেতাম প্রকৃতির বুক থেকে। আমার সব পূর্ণতা তোমাকে ঘিরে। তুমি আছ বলেই আমার এত আয়োজন। তুমি আছ বলেই ভালোবাসার আকাশ ছুঁতে পেরেছি। যে ঘরে তুমি জন্ম নিয়েছ, সে ঘরে জান্নাতি সুখ খুঁজে পাই। পবিত্র মনে হয় তোমার অপরূপ সৌন্দর্য। তোমার চোখে চোখ পড়লেই মায়াময় নেশার বাঁধনে সহসা জড়িয়ে যাই। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যে তুমি অপরূপ উর্বশী। তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক সহজ। যেদিকে তাকাই শুধু তোমার প্রতিচ্ছবি চোখে পড়ে। আমার আকাশের সবটুকু আলো তুমি। তোমার বিহনে সব অন্ধকার দেখি। পূর্ণিমা জোছনার চেয়েও স্বতঃস্ফূর্ত তোমার দেহের স্বর্গীয় নূর। বিধাতার হাতে গড়া অপূর্ব সুন্দর তুমি। তুমি আছ বলেই কবিতায় এত মুগ্ধতা। পাখির কণ্ঠে এত সুরের মূর্ছনা।
কখনো তুমি হারিয়ে গেলে শোকার্ত সাগরে ডুবে যাব। বৃথা হবে মানবজীবন। অঙ্কের দুর্বলতা আরও বেড়ে যাবে। ইংরেজি ভাষা তখন আরও কঠিন মনে হবে। বাংলা ভাষার চেনা অক্ষরে কথা বলতেও হয়তো ভুলে যাব। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার মতো এতটা অমানবিক তুমি কোনোদিন হয়ো না। মানতে পারব না তোমাকে ভুলে যাওয়ার দস্তখত। তোমাকে পেয়েছি বলেই নতুন উদ্যমে বেঁচে থাকার প্রেরণা পাই। তুমিহীন নিষ্প্রাণ আমি। অস্তিত্বহীন আমার মানবজীবন। আমার যাপিত ভয় এবং দুর্বলতা তোমাকে ঘিরে। তোমার অগোচরে কাউকে কল্পনায় আনতে পারি না। লিখতে পারি না মানবিক বোধের পঙ্ক্তিমালা। পৃথিবীর সব দুর্ঘটনা আমি রোধ করতে পারি, যদি তুমি পাশে থাকো। থামাতে পারি কালবৈশাখীর মাতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারি স্থলভূমি, যদি তোমার কাছে থাকার নিশ্চয়তা পাই।
আমি নাস্তিকতায় বিশ্বাসী নই। আস্তিক বলেই আমার ভালোবাসার তীব্রতা এত প্রখর এবং শক্তিশালী। তোমার সঙ্গে বেঁচে থাকাটাই আমার সংগ্রাম। আমার সব অনুভূতির অভিলাষ তুমি। যাপিত বোধের মনস্কাম তুমি। কখনো তোমার লুকোচুরি মানতে পারব না। আমার রক্তের বিশুদ্ধতা তুমি। কল্পনা এবং শখের মানবী তুমি। তোমাকে নিয়েই যত ছ্যাবলামি আমার। তোমার হাতে বাসন্তী ছোঁয়া পেলে চেতনায় অনুভূত হয় প্রেমের জাগরণ। তখন তোমাকে আরও কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়। তুমি এক প্রচণ্ড নেশা। যে নেশায় আমি পুরোপুরি আসক্ত। কাটিয়ে উঠতে পারি না এমন কঠিন আসক্ত থেকে। তবু তোমাকে কাছে পেতে মন চায়। মন চায় প্রতিনিয়ত তোমাকে আলিঙ্গন করি। মিশে যাই তোমার দৈহিক সৌন্দর্যের মাঝে।
বলতে পারো কেন এত মায়াবী তুমি? কেন এত কাছে টানো আমাকে? কেন এত পরাভূত করো প্রতি মুহূর্তে? বলতে পারো আমার কী দোষ? আমি তো তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবনায় আনতে পারি না। কিছু ভাবতে পারি না তোমাকে ছাড়া। তোমার একটু বিরহ আমার বেঁচে থাকার অন্তরায়। মনে হয়, শামুকের মতো দরজা বন্ধ করে বেঁচে আছি একলা। পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় তোমাকে দেখতে দেখতে বিভোর। তোমাকে মন ভরে দেখার তৃষ্ণা একজীবনে শেষ হওয়ার নয়। তাহলে ঈশ্বর কি সব মুগ্ধতায় তোমাকে আবদ্ধ করেই রেখেছে? কেন আমার ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া? কেন আমি এত ভালোবাসি তোমাকে? তুমি কি বলতে পারো? কেন আমার ঘুমের মধ্যে এসে মিশে থাকো তুমি? কেন এত আকর্ষণ তোমার মধ্যে? অথচ হাত বাড়ালেই তোমাকে ছুঁতে পাই।
তোমার ওপরে শুয়ে নদীর জলে ভাসতে ভাসতে অপ্রতিম সুখ খুঁজে পাই। গাইতে পারি দেহতরীর গান। শুনতে পাই পরমাত্মার ইন্দ্রিয় কথোপকথন; কিন্তু আমি কোনো সাধক নই। নই কোনো পবিত্র আত্মা। তবে কি তোমাকে ভালোবেসে এত দেউলিয়া হয়েছি? আজকাল যে হারিয়ে ফেলেছি কথা বলার অধিকার! সেটা কি তুমি ফিরিয়ে দিতে পারো প্রিয়? বিশ্বাস করো, তোমাকে ভালোবেসে আমি পরিপক্ব হতে চেয়েছি। কখনো দেউলিয়া হতে চাইনি। তবে কি এটাই আমার প্রাপ্তি ছিল? অথচ তুমি চাইলেই আমাকে বাঁচাতে পারো। মারতেও পারো ভালোবাসার অপরাধে। তোমার হাতে মরে যেতেও আমার আপত্তি নেই। তোমার ইচ্ছাতেই আমি অবনত। আমার নিঃসঙ্গ সময়গুলোতে তোমাকে খুব কাছে পেতে মন চায়। মন চায় তোমার পুরো শরীরজুড়ে আলতো পরশ মাখি। মন চায় তোমার আকাশে পাখি হয়ে ওড়াউড়ি করি।
আমার সব রাগ অভিমান ভালোবাসা তুমি। কখনো আমার চোখের আড়াল হয়ো না। কখনো তোমার আমার মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করো না। তোমার সব ক্ষেত্রে আমাকে পাশে রেখো। কখনো আমাকে একা করে দিয়োনা। নিশ্বাস নিতে পারব না তোমাকে ছাড়া। আমার জীবন-মরণ শুধু তুমি। শুধু তোমার সঙ্গেই মন জ্যোৎস্নায় ডুবতে চাই। ঘর বাঁধতে চাই সবুজ শ্যামলিমার সুদূর প্রান্তরে। মেঘের বৃষ্টিতে তোমার সঙ্গে ভিজতে চাই। আঁকাবাঁকা পথের নিকুঞ্জ দ্বারে তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে চাই। নীলিমার কোল ঘেঁষে দুজনে মিলে সমুদ্র সাঁতরাতে চাই। এত ভালোবাসি তোমাকে।
লাল টিপ কপালে বাসন্তী শাড়িতে ইচ্ছেমতো তোমাকে সাজাব। হাতে হাত রেখে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল গুঁজে দিব চুলের খোঁপায়। ঠোঁটজুড়ে মেখে দেব শুকনা ফুলের আবির মাখা রেণুকা। তবু তোমার প্রতি আমার দৈহিক আকর্ষণ কমে যাওয়ার নয়। তুমি আমার সব অনুভূতির বিমুগ্ধতা। তোমাকে হারালে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ব। তোমাকে আমি আমার জীবাত্মা মেনেছি। তুমি আমার ভালোবাসার অসুখ। যার স্পর্শ পেলেই সুস্থ হয়ে উঠি। আগুনজ্বলা বসন্তের আগমনে তোমাকে স্নিগ্ধতার মায়াজালে জড়িয়ে ফেলেছি। চরম সুখের বোধশক্তি তুমি। কোনোদিন তোমাকে হারিয়ে ফেলার আগেই যেন আমার মৃত্যু হয়। তোমার বিকল্প আমি কাউকে মানতে পারি না। পৃথিবীর বুকে একমাত্র তোমাকেই অসম্ভব ভালোবাসি। আমার সব দুর্বলতার কেন্দ্রবিন্দু তুমি। তোমার দেহের নরম ছোঁয়া প্রতি মুহূর্তে আমাকে বিমোহিত মায়ায় জড়িয়ে ফেলে।
তুমি পাশে থাকলেই বসন্তের সমারোহ চারপাশে বিরাজ করে। সুখের তরি হাত ইশারায় ডাকে। মেঘেরা খেলা করে তুমুল উচ্ছ্বাসে। মায়াবী চাঁদের জোছনা চুম এঁকে দেয় চৈতন্যের পালে। সবকিছু তখন বেমানান মনে হয়। মনে হয় তোমার মধ্যেই পৃথিবীর যাপিত সুখ। তোমার অস্তিত্ব আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। চারদিকে এত রঙের বাহার। বৃষ্টির এত আনাগোনা। রোদের এত প্রখরতা। ঝলমলে প্রকৃতির নান্দনিক ফোয়ারা চারদিকে ছড়িয়ে থাকে। তুমি ধরণিতে না এলে হয়তো আমার অস্তিত্ব অনেক আগেই বিলীন হয়ে যেত। তুমি জীবনে না এলে পৃথিবী আমার কাছে অসহ্য মনে হতো। তুমি আমার নীরবতার ভাষা। তুমি আমার জৈবিক সুখের আন্তবিক প্রফুল্লতা।
আমার সব দুঃসাহসিক অভিযান তোমাকে জয় করার নিমিত্তে। আমার টিকে থাকার অনুপ্রেরণা তুমি। জীবনের সব প্রতিকূলতার মধ্যে তোমাকে পাশে চাই। জীবনের সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তোমাকে নিয়ে জয়ী হতে চাই। বাহুডোরে বাঁধতে চাই তোমার আমার চেতনাবোধ। এক নিশ্বাসে এবং এক বিশ্বাসে দুজন মিলে সুন্দর পৃথিবী সাজাতে চাই। যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্যবোধ। কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হবে না। যেখানে সবাই মিলেমিশে বসবাস করবে। গড়ে তুলবে মানবিক চেতনা বোধের জগৎ। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এটাই হবে বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। তবেই পৃথিবী সুন্দর দেখাবে। হাতছানি দেবে রহমতের দরজা খুলে।
আমৃত্যু তুমি আমার পাশে থাকলে দুঃখ কখনো ছুঁতে পারবে না। কখনো গ্রাস করবে না আসুরিক রাক্ষসেরা। তুমি আমার মন হারানো গল্পের নায়িকা। তুমিই আমার ভালোবাসা রাজ্যের রাজরাজেশ্বরী। তোমার সঙ্গেই হাঁটতে চাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। কথা দাও কখনো আমাকে ফেলে যাবে না। কখনো আমার কষ্টের কারণ হবে না। এমন করলে আমি মরে যাব। সত্যিই মরে যাব প্রিয়তমা। জীবনের সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তোমাকে নিয়ে বন্ধুর পথ পেরিয়ে যেতে চাই। তুমি থাকবে তো পাশে? বলো না মনোহারিণী! তোমার হাত ধরেই জীবনের প্রথম বসন্তের ফাগুনছোঁয়া অনুভব করেছিলাম। সেই থেকে প্রতি মুহূর্তে আমার জীবনে তোমার ছোঁয়ায় ফাগুন আসে বসন্তের আগমনে। যা অন্য কিছুতে অনুভব করতে পারি না। তুমিই আমার ঋতুরাজ বসন্তের আগুনমুখী ইচ্ছাডানা। যার ডানায় ভর করে ঘুরে বেড়াব সুদূর আকাশে মেঘের ওপার বাসন্তী উচ্ছ্বাসে অনাবিল ভালোবাসার দৌরাত্ম্যে।
চৌহালী, সিরাজগঞ্জ