ফিরে আসা

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে।
‘হ্যালো, আমি আয়শা বলছি। আপনি কে?’
ওপাশ থেকে ঠান্ডা কণ্ঠে উত্তর আসে, ‘বহুদিন পর!’

এই কণ্ঠ চেনা। ফোন কেটে দিয়েই আয়শা ছুটে যায় নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে আলমারির নিচ থেকে বের করে পুরোনো কাঠের বাক্স। ছয় বছর আগের বাক্স।
তালা খুলতেই বেরিয়ে আসে পুরোনো চিঠি, একটি রিস্টওয়াচ আর একটি ডায়েরি। রিয়াদের সবকিছু। রিয়াদ আয়শার প্রথম ভালোবাসা। ছয় বছর আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। কেস হয়, খোঁজ চলে, কিন্তু সে মেলে না।

ডায়েরি খুলে পাতাগুলো ওলটায় আয়শা। প্রতিটি পাতায় তাদের স্মৃতি। হঠাৎ এক পাতায় লেখা দেখে গা শিউরে ওঠে, ‘১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯—যদি একদিন আমি হারিয়ে যাই...৬ বছর পর, ঠিক এই দিনে ফোন বাজবে। দরজা খুলে দিয়ো না। তখন আমি আর রিয়াদ থাকব না।’

ফোন আবার বেজে ওঠে। সেই কণ্ঠ, ‘আয়শু, দরজা খুলে দাও, আমি এসেছি। বিশ্বাস করো।’
আয়শার হাত কাঁপে। দরজার নিচে দেখা যায় ছায়া। ধীরে দরজার কাছে যায়, কানে কান রাখে। নিশ্বাসের শব্দ—ভারী, যেন যন্ত্রের মতো। তার চোখে জল আসে। যদি ও সত্যিই রিয়াদ হয়?

কিন্তু ডায়েরির সেই লাইন...
সে পেছনে সরে আসে। বাক্সে সবকিছু ঢুকিয়ে তালা লাগায়। বাইরে কেউ দরজায় ধাক্কা দেয়। তিনবার। তারপর নিস্তব্ধতা।

আয়শা জানে, দরজাটা খুললে বাস্তব আর অজ্ঞাতের মাঝের সীমা ভেঙে যাবে।
ফোন আবার বাজে। কণ্ঠটা এবার ফিসফিস করে বলে, ‘তুই বিশ্বাস করিসনি, তাই তো আমি ফিরে এলাম...অন্য রূপে।’

একঝাপটা ঠান্ডা হাওয়া ঘরে ঢুকে পড়ে। ডায়েরির পাতা নিজে থেকেই খুলে পড়ে, ‘শেষটা তো তুই-ই লিখবি, আয়শা...।’
বাতি নিভে যায়।

শিক্ষার্থী, চিলাহাটি সরকারি কলেজ, নীলফামারী