নীল রঙে আবৃত যে শহর

মরক্কোর শেফশাওয়েন শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়ি এভাবে নীল রঙে আবৃতছবি: সংগৃহীত

আকাশের নীল রঙে মুগ্ধ হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু তা-ই নয়, মাথার ওপরে ছেয়ে থাকা এই বিশাল ঘন নীল আকাশ দেখে কেউ বিরক্ত হয় না কখনোই। নীল প্রায় সবারই পছন্দের রং।

আচ্ছা বলুন তো, আপনি যেখানে থাকছেন, সে বাড়িটাকে সম্পূর্ণ নীল রং করা হলে কেমন অনুভূতি হবে? শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে শুধু একটি বাড়িই নয়, পুরো একটা শহর নীল রঙে রাঙানো। মরক্কোর বিখ্যাত শহর শেফশাওয়েন, যা চাওয়েন নামেও পরিচিত। মরক্কোর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই শহরটিকে ‘ব্লু সিটি’ নামেও ডাকা হয়। এই শহরের সব বাড়ি ও পথঘাট নীল রঙে সাজানো।

মরক্কোর পার্বত্য অঞ্চল তেতুয়ান ও উয়াজানের মাঝামাঝি অবস্থিত শহরটি। জায়গাটি ১৪৭১ সালে একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর স্পেন থেকে পালিয়ে আসা মুসলমান ও ইহুদি উদ্বাস্তুদের সঙ্গে এর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আন্দালুসি ও ঘোমারা জনগণের মিশ্রণে স্থানীয় সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়েছে। অর্থনীতি, কারুশিল্প ও পর্যটনের জন্য শহরটির খ্যাতি রয়েছে।

মরক্কোতে যত সুন্দর শহর আছে, তার মধ্যে শেফশাওয়েন একটি। ১৭৪১ সালে মোল্লা আলি বিন শমশের এই শহরের গোড়াপত্তন করেন। মূলত পর্তুগিজ আক্রমণ ঠেকাতেই দুর্গ হিসেবে এই শহরের উৎপত্তি ঘটে। পরে ১৪৯২ সালে ঘোমারা গোত্র, মরিসকস ও ইহুদিরা এই দুর্গের চারপাশে বসবাস শুরু করে। প্রায় দুই দশক পরে মুসলমান ও ইহুদিরা এসে শহরটিকে আরও বিস্তৃত করে। স্পেনের গ্রানাডায় মুসলমান ও ইহুদিদের যখন জোর করে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়, তখন তারাও অভিবাসন শুরু করে।

পুরো শহর নীল রঙে সাজানোর পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। ১৪৭১ সালে গড়ে ওঠা শেফশাওয়েন শহরে একসময় নানা ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করত। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ, বিশেষ করে ১৯৩০-এর দশকে হিটলারের ভয়ে ইহুদিরা পালিয়ে আশ্রয় নেয় মরক্কোর এ শহরে। সে সময় ইহুদি শরণার্থীরা নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে পুরো শহর নীল রঙে ঢেকে ফেলে। তাদের কাছে নীল রং ছিল আকাশ আর স্বর্গের প্রতীক। আকাশের নীলটুকু মর্ত্যে নামিয়ে আনতেই শহরজুড়ে নীলের ছড়াছড়ি।

নীল রং হওয়ার পেছনে আরেকটি মজার কারণও থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। সেটা হলো, মশার হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার একটা চেষ্টা। মশা নাকি টলটলে নীল জল একটুও পছন্দ করে না।

১৯৪৮ সালে অধিকাংশ ইহুদি ইসরায়েল চলে গেলেও শহরের নীল রং রয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবছর বসন্তের সময় শহরের বাসিন্দারা একবার করে পুরো শহরে নীল রঙের প্রলেপ দেন। স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকেও পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখার সব রকম চেষ্টা করা হয়।

৪০ হাজার মানুষের বসতি শেফশাওয়েন শহরে সারা বছর পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় থাকে। নীল শহরটির মানুষ ও খাবারদাবারেরও রয়েছে বেশ সুনাম।

হাটহাজারী, চট্টগ্রাম