আমাদের প্রথম দেখা

অলংকরণ: তুলি

নাদিয়া এশা,

ঘনায়মান সন্ধ্যার অপরূপ রূপের মাধুর্য ধরে রাখার ক্ষমতা আমার হৃদয়ের নেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই প্রজাপতি হয়ে আপনি এসেছিলেন আমার তীরে। এই অনুভূতি প্রকাশের কোনো ভাষা জানা নেই। জানা নেই আপনার মনের গোপন রহস্য। বুঝতে পারি না আপনার মিষ্টি হাসির সারকথা। তবে জানি, ভালোবাসার অন্তহীন বিবর্তনের মধ্যেও সুখ উঁকি দেয় মনের কোণে।

১৮৪ কিলোমিটার, প্রায় ৪ ঘণ্টার যাত্রাপথে আপনার আমার দেখা হবে ভাবিনি কোনো সময়। অবশ্য আমাদের জীবনে কিছু কিছু জিনিস অপ্রত্যাশিত ভাবেই ঘটে যায়। বরিশাল থেকে মাদারীপুর চলে এলাম, তখনো সাহস করে আপনার দিকে একবারও তাকাইনি। ইচ্ছে করেই জানালা খোলা রেখেছিলাম, নির্মল বাতাসে আপনার চুলগুলো যখন উড়তে থাকে ; ভীষণ সুন্দর লাগে আপনাকে। তবে কি আমাদের কথা হওয়াটা একটা কাকতালীয় বিষয় ছিল! না হয় কেনই বা আপনার ফোনটা বন্ধ হয়ে যাবে, কেনই বা আমার ফোন দিয়ে কল করা হবে। আপনার ঐ মায়াবী চোখ দুটো ভীষণ সুন্দর। ঐ চোখের প্রেমে যেকোনো ছেলে পড়বে, এতে আমার কোনো দোষ নেই। দোষ আপনার মায়াবী চোখের।

সেদিনের আবহাওয়াও ভালো ছিল। বাইরে বৃষ্টি, আর বাসের ভেতর আপনার কণ্ঠে রণ মজুমদারের লেখা—
অনেক করে পাব, তোমার অনেক বেশি হব;
হাতটা ধরে, পথটা ভুলে মনের কথা কবো।

সেদিন প্রকৃতিও বোধহয় চেয়েছিল তাসফীর এষার প্রেমে পড়ুক। তবে এখানেই যে শেষ, তা কিন্তু নয়। জ্যামের শহরে বাসটাও সেদিন ফুলের পাশেই থামল। কী করব বলুন! একজনকে বলার আগেই ফুলটা দিয়ে দিল; মনে হয় হকার মামাও চেয়েছিল এই রিক্ত ছেলেটার প্রেমে কেউ পড়ুক। গন্তব্যে আশার পরে আপনি চলে গেলেন এক দিকে আর আমি অন্য দিকে। তার পর থেকে... বাড়ি থেকে আশা-যাওয়ার পথে ঐ হানিফ পরিবহনেই আসতাম; যদি ভুল করে আবার আপনার দেখা পাই। তা আর হলো না।

ভাবলাম আপনাকে একটা বই দিই। যদি কোনো ফিডব্যাক আসে। কিন্তু গন্তব্য যে আমার জানা নেই। আছে শুধু আন্টির ফোন নম্বরটা। শেষ অবধি গন্তব্যহীন পারসেল পৌঁছালেও আপনার কোনো দেখা ছিল না। নিজেকে কেন জানি ছোট মনে হচ্ছিল। অবশ্য যেই ২১ তারিখ আপনার সঙ্গে প্রথম দেখা, আবার সেই ২১ তারিখই আপনার প্রথম এসএমএস। সবকিছুই কাকতালীয় ছিল।যাই হোক, আমি আপনাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম জনমানবহীন নিঝুম দ্বীপের নিঃসঙ্গতা। আচ্ছা, আপনার কি বিরহের ব্যথা মাপার কোনো অভিজ্ঞতা আছে? গোলাপের বদলে হাতে অন্য ফুল তুলে দিয়েছিলাম বলে কি বুঝতে পারেননি আমার হৃদয়ের অনুভূতি?

আজ বাস জার্নির সময়, আপনার কথা ভীষণ মনে পড়েছিল। একা একা জানালার দিকে তাকিয়ে আপনার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু কী লিখব ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো আপনাকে নিয়ে একটা চিঠি লিখি। চিঠি সস্তা এবং সুন্দর। কিন্তু লিখতে গিয়ে খুঁজে পাচ্ছিলাম না কথা। কী লিখব? আপনি যে লেখার চেয়েও সুন্দর।

হয়তো আমাদের আর দেখা হবে না, কথা হবে না। তারপর হয়তো একদিন দেখা হবে। তখন আমার আবেগের চাহনি দেখে বুঝে নিয়েন, ভালোবাসার গভীরতা। দূর থেকে চাইব আপনি ভালো থাকেন সব সময়।

ইতি
বাসের সেই ছেলেটি