জীবনে আগ্রহ, উদ্দীপনা ও অবাক হওয়াটুকু বেঁচে থাকুক

জীবনকে উপভোগ করতে হবেছবি: অধুনা

ইট-পাথরের এই নগরীতে বেড়ে ওঠা শহুরে ছেলেমেয়েদের কৌতূহল থাকে না বললেই চলে! শহরের এই প্রজন্মের জীবন দেখার আঙ্গিকটা গ্রামের দুরন্ত ছেলেমেয়েদের তুলনায় ভিন্ন। তারা দিনশেষে নানা বাস্তবতায়, নানা অজুহাতে খুব যত্নে ভুলে যায় অবাক হওয়া, শীতের পাতাঝরা বৃক্ষের মতো হয়ে যায় তাদের কৌতূহলী মন। একটা সময়ে গিয়ে পৃথিবীর কোনো কিছুই যেন আর তাদের অবাক করতে পারে না, হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না।

প্রতিদিন অসংখ্য কৌতূহলী মনের মৃত্যু ঘটে, সেই খবর কি কেউ রাখে? যদি পোস্টমর্টেম করা হতো? যদি সঠিক নথি রাখা হতো, তবে নগরী ছেয়ে যেত মৃত্যুর খবরে। আঁতকে উঠত আমাদের অগ্রজগণ! যাঁরা আমাদের এই ভগ্ন সংস্কৃতি উপহার দিয়েছেন।

আইসিইউ কিংবা লাইফ সাপোর্ট দিয়েও আসলে এই শহরের মানুষের কৌতূহলকে বাঁচানো যায় না। এটা যে তারা ইচ্ছায় করে ব্যাপারটা এমন নয়; জীবন ও জীবিকার তাগিদ, অতি আত্মসম্মানবোধ, লোক দেখানো স্বভাব, স্বল্পজ্ঞানে পাণ্ডিত্য, মেকি জীবনাদর্শ ও অহংকারী মনোভাব নিজ হাতেই রক্তাক্ত করে মেরে ফেলে কৌতূহলকে।

যারা শেষ অবধি অতি কষ্ট করে হলেও আগ্রহ আর উদ্দীপনাটুকু টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়, তারা আর যাই হোক হতাশায় নিমজ্জিত রোগীর সারিতে শামিল হয় না। তারাও যে সবটুকু আগ্রহ আর উদ্দীপনাকে ধরে রাখতে পারে বিষয়টি এমন নয়, জীবন তাদেরকে নানাভাবে নাজেহাল এবং অপদস্ত করার মাধ্যমে আগ্রহ ও উদ্দীপনাকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপরও যারা সাহসী, তারা এসব হুমকির ধার ধারে না। জীবনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আগলে রাখে আগ্রহ আর উদ্দীপনাকে।

এদিকে যেই গুটিকয় মানুষ অবাক হওয়া আটকে রাখতে চায়, তারা আবার আকাশ সমান স্বপ্ন দেখে। তাদের কল্পনাশক্তি মহাশূন্যকেও ছাড়িয়ে যায়। তবে তারা তা লোককে জানান দিতে চায় না। মাঝেমধ্যেই অনুভব ও অনুভূতির চূড়ান্ত রক্তক্ষরণ তাদের অবাক হওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

জীবনে যা কিছুই হোক, কৌতূহলের লাশ দাফনের পরে, তুমুল ঝড়ে বেঁচে যাওয়া পাখির বাসার মতো—জীবনে আগ্রহ, উদ্দীপনা ও অবাক হওয়াটুকু বেঁচে থাকুক।

সাবেক সভাপতি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি বন্ধুসভা