মিতুর হাসির কারণ

অলংকরণ: তুলি

হাসি কোনোভাবেই থামছে না। মেয়ের অযথা হাসি দেখে আফজাল সাহেব মুচকি হাসছেন। তিনি যখন সুস্থ ছিলেন, তখনো তো মিতু এত হাসাহাসি করত না। তার হঠাৎ কী হলো? সবার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। বাবা অসুস্থ আর মেয়ে তাকে দেখলেই হাসতে থাকে। এ কেমন কথা!

আফজাল সাহেব গত সপ্তাহে হার্ট চেকআপ করেছেন। ডাক্তার বলেছেন, হার্টে মারাত্মক সমস্যা। সময়মতো উন্নত চিকিৎসা না করালে বড় ক্ষতি হবে। এ মুহূর্তে উন্নত চিকিৎসা করাতে হলে প্রচুর টাকা লাগবে। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ পরিবারটির কাছে নেই। আবার কারও থেকে যে কিছু টাকা ঋণ নেবে, সেই জো নেই। সবাই নিজ নিজ সংসার গোছাতে ব্যস্ত।

এ রকম সংকটময় সময়ে বাড়ির সবার টেনশনে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অন্যদিকে আদরের মেয়েটা কেবল হাসে। বড় চাচা তো এরই মধ্যে ধমক দিয়েছে কয়েকবার। তবু মিতুর হাসি বন্ধ হয় না। মেয়ের হাসি দেখে আফজাল সাহেবও না হেসে পারেন না। বাড়ির লোকদের সামনে কষ্ট করে হাসি চেপে ধরার কৌশল করেও অনেকবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মেয়ের থেকে হাসির কারণ জানার চেষ্টাও করেছেন। একবারও সফল হননি।

একদিন আফজাল সাহেব শুয়ে আছেন। মিতু আস্তে করে ঘরে ঢুকল। ‘আব্বু, আমার হাসির কারণ জানাতে এলাম তোমাকে। আমি কেন এত হাসি? তাহলে শোনো, ইংরেজি ক্লাসে ফাহমিদা ম্যাডাম একদিন আমাদের বলেছিলেন, বেশি বেশি হাসলে হার্ট সতেজ থাকে। সে জন্যই আমি তোমাকে হাসানোর চেষ্টা করি। আমার কাছে তো আর এত্তগুলা টাকা নেই; যেটা আমি তোমার চিকিৎসার জন্য দেব। আমি তোমার মেয়ে হয়ে এতটুকু তো করতেই পারি।’

মেয়ের কথা শুনে আফজাল সাহেব চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। নিজের অজান্তে গাল ভিজে গেল। মিতুর কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন, ‘দোয়া করি, আমার আম্মুটি একদিন অনেক বড় হবে।’

শেরপুর, বগুড়া