আমি মাহাদী। ক্লাস থ্রিতে পড়ি। বয়স এগারো। থাহি হাসনাবাদ বস্তিতে। আব্বা নাই। মইরা গেছে। মা আছে। মাইনষের বাড়িত কাম করে। তয় কত্ত দিন হয় মায় অসুস্থ। কামে যাইতে পারে না। আমরা চার ভাইবোন। বড় ভাই বিয়া কইরা বউ লইয়া চইল্লা গেছে। আমগো কুনো খবর লয় না। বড় বইনেরও বিয়া হইয়া গেছে। আমগো বাইত আহে না। আমার ছোট বইনডার বয়স তিন বছর। আমি সংসার চালাই। একটা ফ্যাক্টরিত চাকরি করি। ব্রাশ ফ্যাক্টরি। ওইডা ইকুরিয়া রাস্তার ঢালে। ব্রাশ বানাই। মেশিন ঘুরাইয়া ঘুরাইয়া ব্রাশ বানাই। সকাল থন বিকাল পন্ত কাম করি। মাঝেমইধ্যে হাতে ব্যথা করে। মেশিন চালাইতে ভুল হইলে মালিক গাইল্যায়। আমার কাছতে একটা ব্রাশ নষ্ট হইলে মাস শ্যাষে টাকা কাইো নেয়। মাঝেমইধ্যে খুব কষ্ট হয়। মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পাই। এই দিয়া চইল্লা যায় কুনুরকম। যেদিন টাকা পাই, সেদিন খুব ভালো লাগে। মা আর ছোট বোনের লাইগ্যা ভালো খাওন কিন্না লইয়া যাই। বোনের লাইগ্যা চকলেট কিন্না লইয়া যাই। অয় হাতে পাইলে কী যে খুশি হয়! অর হাসি দেখতে আমার খুব ভাল্লাগে। মনডা ভইরা যায়।
আমার মায় আমার লেইগা ভাত, আলুভর্তা আর ডাইল রাইন্ধা বইয়া থাহে। আমি বাসাত গেলে একলগে বইয়া খাই। প্যাট ভইরা ভাত খাই। অনেক সুমায় মায় আমারে খাওয়ায় দেয়। মার হাতের খাওয়ান খাইতে খুব স্বাদ লাগে। খাওনের পর মার কাপড়ের আঁচলে হাত মুছতে বেশি ভালো লাগে। বুকের ভিতরে ক্যামন য্যান একটা শান্তি শান্তি লাগে। মায় আমারে আর বইনরে খুব ভালোবাসে।
আমি ইস্কুলে যাইতে পারি না। তয় যাইতে খুব মুন চায়। পড়ালেহা আমার ভাল্লাগতো। ইস্কুলে যাওনের আগে সকালে মায় চুলে ত্যাল দিয়া মাথা আঁচড়াইয়া দিত আর কইতো, ‘তোরে বড় ডাক্তার বানামু।’ ইস্কুলে আমার স্যারেরা কয়, পোলাডার মাথা ভালো আছে। হাতের লেহাও পরিষ্কার।
তয় ইচ্ছা থাকলেও আমি আর পড়তে পারুম না। সারা দিন ক্যাম করলে কহন ইস্কুলে যামু আর কহন লেহাপড়া করুম? যা–ই হউক, হ্যাতে আমার কষ্ট নাই। আমি আমার ছোড বইনেরে পড়ামু। অনেক পড়ামু। ডাক্তার বানামু। মায় আমারে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দ্যাখতো। আমি স্বপ্ন দেহি, আমার বইনরে বড় ডাক্তার বানামু। মার স্বপ্ন সইত্য করমু। অসুস্থ মায়রে চিকিৎসা কইরা সুস্থ কইরা তুলব আমার বইন।
সহসভাপতি, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ