যাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে নিত্য লড়াই করে বাঁচেন, তাঁরা ভালো থাকেন না। বাঁচার তাগিদে ঘর ছাড়েন। উঠানবাড়ি কিংবা পৈতৃক ভিটামাটির মায়ায় আবার সেখানে ফিরে আসেন। হাজারো দুর্দিন আর হাহাকারের তীব্র আর্তনাদ তাঁদের জীবনে। তাঁরা উপকূলবাসী।
মাইকিং কিংবা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত কানে বাজার আগেই যেন তাঁদের মনে ভয় আর উৎকণ্ঠার সংকেত বেজে ওঠে, চিন্তায় পড়ে যান, এই বুঝি সব ভাসিয়ে নিল! শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। কেউ ছোটেন গরু-ছাগল কিংবা ছেলেপুলে নিয়ে, কেউ চেষ্টা করেন কোনোমতে ঘরটা রশি দিয়ে আটকে রাখতে। শেষ সম্বল এটা অনেকের, মন তো আর মানে না।
চারদিকের প্রবল বাতাস আর সাগরের ঢেউখেলানো মরণখেলায় তাঁরা বারবার হেরে যান, হেরে যান প্রকৃতির কাছে, হারিয়ে ফেলেন সম্বল। কেউ হারান পৈতৃক ভিটামাটি, কেউ বা হারান তিল তিল করে গড়ে তোলা শখের বাড়ি। আবার কেউ নিঃস্ব হয়ে সাগরপানে চেয়ে চেয়ে কাঁদেন। কাকে বোঝাবেন এই দুঃখ? প্রকৃতি যখন তাঁদের প্রতি এতই বেখেয়ালি।
অনেকের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি। এখনো দেশের অনেক জায়গায় অরক্ষিত বেড়িবাঁধ, নেই কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি। প্রতিনিয়তই দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটে উপকূলবাসীর। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ঘূর্ণিঝড়ে দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মহাবিপৎসংকেত শুনতে শুনতে তাঁরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। গল্পের কোনো এক শিরোনামে হয়তো একটা নাম দিয়ে রেখেছে, অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। কখন থামবে তাঁদের এই কান্না?