ক্যারিয়ারে এগিয়ে থাকতে যেসব দক্ষতা প্রয়োজন

বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বাড়তি দক্ষতা অবশ্যই রাখতে হবে। মডেল: তূর্য ও অহনাছবি: কবির হোসেন
‘আমি নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার হাত-পা কাঁপছে। মুখ থেকে একটা কথাও ঠিকঠাক বের হচ্ছিল না। জানা বিষয়ে উত্তর করতে পারছি না। কী যে একটা বাজে অভিজ্ঞতা বলে বোঝাতে পারব না।’ প্রথম ইন্টারভিউর কথা বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা জানান তিনি।

এক ভাইকে চিনতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টপার ছিলেন। অন্তর্মুখী স্বভাবের। ‘আমি নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার হাত-পা কাঁপছে। মুখ থেকে একটা কথাও ঠিকঠাক বের হচ্ছিল না। জানা বিষয়ে উত্তর করতে পারছি না। কী যে একটা বাজে অভিজ্ঞতা বলে বোঝাতে পারব না।’ প্রথম ইন্টারভিউর কথা বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা জানান তিনি।

পেশাগত জীবনে ঢুকতে গেলে আপনি শুধু বড় ডিগ্রি কিংবা সার্টিফিকেট নিয়ে দাঁড়ালেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। পড়াশোনার পাশাপাশি অবশ্যই দক্ষতার দিকেও নজর দিতে হবে। পেশাগত জীবনে উন্নতির জন্য দক্ষতার বিকল্প নেই। মজার বিষয় হচ্ছে, বেশ কিছু দক্ষতা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কিংবা ব্যক্তিজীবনে চর্চা করে থাকলেও সেগুলোর দিকে খুব একটা গুরুত্ব দিই না। সঠিক পদ্ধতিতে সেগুলো আয়ত্ত করলে পেশাগত জীবনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং অন্যদের থেকে এগিয়ে নিয়ে যায় বহুলাংশে।

ক্যারিয়ারে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে যেসব দক্ষতার দিকে নজর দেওয়া দরকার।

• যোগাযোগ দক্ষতা: আমাদের মধ্যে অধিকাংশই অনর্গল কথা বলতে পারলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে জড়তায় ভুগি। কথা খুঁজে পাই না, কথা হারিয়ে ফেলি। চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য যোগাযোগ দক্ষতা এমন একটি গুণ, যার যাচাই শুরু হয় চাকরি পাওয়ার আগে থেকেই। চাকরির ক্ষেত্রে এটি যেমন সহকর্মীদের মধ্যে আরও বেশি প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, তেমনি ব্যবসার ক্ষেত্রেও আপনার বাইরের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। লিখিত ও মৌখিক দুই ধরনের দক্ষতাই আপনার পেশাগত জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

• নেটওয়ার্কিং: মার্কেটিং খাতে একটা কথা আছে ‘যত প্রচার তত প্রসার’। নিজেকে যত বেশি ছড়িয়ে দিতে পারবেন, তত বেশি সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আপনি যখন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবেন, তখন নেটওয়ার্কিং দক্ষতা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। পেশাগত জীবনে প্রবেশের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।

• লার্নিং: ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’ লার্নিং স্কিলের জন্য কথাটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তা ছাড়া আমরা আমাদের সামনে আসা ভুল কিংবা উপদেশের দিকে কমই নজর দিই। ক্লাসের ভেতরে স্যারদের ধরিয়ে দেওয়া টুকিটাকি ভুলগুলো কিংবা উপদেশ হেলায় উড়িয়ে দিই। ক্লাসরুম বা কর্মক্ষেত্র যেখানেই হোক না কেন, শেখার মানসিকতা তৈরি করতে পারলেই অভিজ্ঞতার প্রসার বাড়বে। যার নতুন কিছু শেখার টেকনিক যত বেশি, সে তত বেশি উন্নতি করতে পারবে।

• সেলফ ম্যানেজমেন্ট: নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারার দক্ষতা অনেক বড় গুণ। এর মধ্যে আপনার গ্রহণ করার ক্ষমতা, ডিসিশন মেকিং, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, টাইম ম্যানেজমেন্ট অন্তর্ভুক্ত। কোন কাজটা আগে করতে হবে, সেটা আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনার চিন্তাশক্তিতে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কাজে লাগিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এটি সব সময় ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

• টিমওয়ার্ক: দলগত কাজ করার মানসিকতা এবং নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারা পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সবার সঙ্গে মিলেমিশে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে কাজ করতে পারলে সেই কাজের সফলতা ধরা সহজ। প্রায় সব জায়গাতেই এই দক্ষতার প্রভাব থাকবে। দলের অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতা নিয়ে কাজ করার চর্চা থাকতে হবে।

• নেতৃত্ব: আমরা অনেকেই নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করলেও কর্মক্ষেত্রে এই দক্ষতাটাকে কাজে লাগাতে পারি না। আপনার অবস্থান পুরো বদলে দিতে পারে এই দক্ষতা। দলের লোকদের কীভাবে পরিচালিত করবেন, তাঁদের থেকে কাজ বের করে নেবেন, সবকিছু আপনার ওপর নির্ভর করবে। ক্যারিয়ারে এগিয়ে থাকতে বড় একটা ভূমিকা রাখে এই গুণ।

• কম্পিউটার দক্ষতা: এখন প্রায় সব জায়গাতেই কম্পিউটার কাগজ–কলমের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুব বেশি কিছু না জানলেও ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মাইক্রোসফট অফিসের বেসিক কাজ, টাইপিং শিখে রাখতে পারেন।

• সমস্যা সমাধান: সমস্যা সমাধানে সবাই পটু না হলেও চেষ্টা করলে সেটাও আয়ত্তে আনা সম্ভব। দেখতে হবে আপনি কোন সমস্যাকে কীভাবে ভাবছেন। সামনে আসা সমস্যাগুলো যদি নিজের মতো সমাধান বের করতে পারেন, তাহলে আপনি সহজেই সবার সামনে চলে আসবেন।

• টাইম ম্যানেজমেন্ট: আপনার হাতে এখন অফুরন্ত সময় মনে হতে পারে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর প্রতিটি সেকেন্ডের হিসাব কষা হবে। এখন থেকেই কোন কাজে কতটুকু সময় ব্যয় করবেন, কোনটা আগে করবেন, এগুলো আয়ত্তে আনতে মনোযোগী হতে পারেন। এই দক্ষতা আপনাকে প্রোডাক্টিভ এবং কাজের মান উন্নয়নে সাহায্য করবে।

• সৃজনশীলতা: গতানুগতিক ধারণা থেকে বের হয়ে নতুন কিছু তৈরি করা। নতুনভাবে চিন্তা করাই সৃজনশীল দক্ষতা। কর্মক্ষেত্রের সফলতা আপনার উদ্ভাবনী শক্তির ওপর দারুণভাবে সম্পর্কিত। এটা শেখার জন্য সৃজনশীল মানুষদের সঙ্গ বেশ কাজে দেয়।

এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বাড়তি দক্ষতা অবশ্যই রাখতে হবে। যে পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, আগে থেকেই সে পেশা নিয়ে গবেষণা করে সেই অনুযায়ী প্রতিদিন একটু সময় দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, অনুশীলন ছাড়া দক্ষতা আনা সম্ভব নয়। অনুশীলন যত বাড়াবেন, দক্ষতা তত বাড়বে।

সাবেক সহসভাপতি, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা